
মিশুক মনির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্ত শীর্ষস্থানধারীদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন কোচিংয়ের টানাটানি শুরু হয়েছে। কোচিং বাণিজ্যের প্রসার ও সুনাম বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কোচিং তাদের এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এর ফলে আগত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিভ্রান্তিতে।
যদিও স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কোচিং বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে বহুদিন থেকেই। তবুও কোচিংয়ের এসব কারসাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। এভাবেই কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কোচিং গুলো নিজেদের সেরা বলে পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের বিভিন্ন ব্যানার ও বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিটে চান্সপ্রাপ্ত শীর্ষ দশ জনের মধ্যে ১ম, ২য়, ৫ম ও ৯ম স্থান অধিকারীদেরকে নিজেদের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছে ইউসিসি, ইউনিএইড, প্যারাগন ও স্কলারস। বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, গ-ইউনিটে ১ম ও ২য় স্থানধারী ঢাকা সিটি কলেজের সাগর নন্দী ও নয়ন ইসলামকে স্কলার, ইউসিসি ও প্যারাগন নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বিজ্ঞাপণ ছেপেছে।
এ বিষয়ে ইউসিসির পরিচালক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে তিনি জানান, ভর্তি কোচিং করতে এসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোচিংয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তখন তাদের ছবিসহ অন্যান্য পরিচয় রেখে দেওয়া হয়। ফলে দেখা যায় শীর্ষস্থানধারীদের নিয়ে কোচিং বিজ্ঞাপণ ও ব্যানার ছেপে থাকে। সাগর ও নয়ন ইউসিসিতেই কোচিং করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এছাড়াও ৫ম স্থানধারী পার্থ প্রতীম রায় কে নিয়ে ইউসিসি, স্কলারস ও ইউনিএইড এবং ৯ম স্থানধারী প্রাঙ্গণ আহমেদকে নিয়ে প্যারাগন ও ইউসিসি নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ’ ইউনিট থেকে চান্সপ্রাপ্ত সিয়াম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ঢাকায় এসে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটা কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কয়েকটা ক্লাশ করার পর আর যাইনি। আমার টাকাগুলো জলে গেছে। পরে নিজেই পড়াশোনা করেছি এবং চান্স পেয়েছি, এখন আমাকেও কোচিংটি তাদের ছাত্র বলে পরিচয় দেবে।’
ভর্তি কোচিংয়ে ক্লাশ নেন এমন একাধিক শিক্ষক জানান, বড় ধরনের মুনাফা অর্জন করাই বিভিন্ন কোচিংয়ের লক্ষ্য। চটকদার বিজ্ঞাপণ ও বিভিন্ন স্কলারশিপের প্রলোভন দেখিয়ে ভর্তিচ্ছু নতুন শিক্ষার্থীদেরকে তারা আকর্ষণ করে। বিভিন্ন কোচিংয়ের প্রধান আকর্ষণ থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর শীর্ষস্থানধারীদের বিভিন্ন কোচিং স্কলারশিপ ও গিফট প্যাকেজের বিনিময়ে আমন্ত্রণ জানায় ও তাদের ছবি রেখে দেয়। এতে করে চান্সপ্রাপ্তদের ছবি বিভিন্ন কোচিংয়ের ছাপানো বিজ্ঞাপণেও মিলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের আবু সুফিয়ান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, কোচিং গুলো নিজেদের ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য মেধাবীদের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপণ করে থাকে। এ সময় কোচিং গুলো স্কলারশিপের প্রলোভণ দেখিয়ে তাদেরকে ফুলেল সংবর্ধনার নাম করে তাদের ছবি তুলে রাখে। এতে নতুন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায়। সরকারের উচিত এসব ভর্তি কোচিং বন্ধ করে দেয়া।
এ বছর গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ হাজার ২৩৪ জন অংশ নিয়ে মাত্র ২ হাজার ২২১জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হার ৫.৫২ শতাংশ। পাশকৃত ১ থেকে ১৩০০ মেধাক্রম পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ফরম ও বিষয়ের পছন্দক্রম ফরম পূরণ করতে পারবে।
প্রকাশ: তুসা