
প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার মাস্টার মাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী ও সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসে বাসে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে।
তবে কারা এই লিফলেট বিলি করছে তা জানা নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন’র (র্যাব)।
মঙ্গলবার এমনই একটি লিফলেট নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র হাতে এসে পৌঁছেছে। আনুমানিক সময় দুপুর ২টার দিকে, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া মোড়ে বেশ কিছু লিফলেট হাতে মধ্য বয়সের এক লোক একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠেন। লোকটির পরনে ছিল সাদা শার্ট আর লুঙ্গি, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই তিনি বাসের যাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকটি লিফলেট ছড়িয়ে দিয়ে নেমে চলে যান।
যাত্রীদের সবার চোখ তখন ওই কাগজে বন্দি। কেউ কেউ ফিস ফিস করে একে অপরের সাথে কথা বলছেন। আর কেউ কাগজটি খুলে দেখেই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলেন। ফটোকপি করা দুই পৃষ্ঠার সাদা কাগজটির প্রথম পৃষ্ঠায় তামিম আহমেদ চৌধুরীর ছবি ও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর ২য় পৃষ্ঠায় রয়েছে জিয়াউল হকের বিস্তারিত তথ্য। কাগজটির দুই পৃষ্ঠার নিচেই লেখা রয়েছে, ‘এরা জঙ্গি, এদের ধরিয়ে দিন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করুন।’
লিফলেটটির বিষয়ে ডিএমপি’র মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেও বিস্ময় প্রকাশ করেন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে এডিসি ইউসুফ বলেন, ‘ডিএমপির পক্ষ থেকে এমন লিফলেট বিলি করার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আর এমন নির্দেশনা থাকলে গণমাধ্যমও এ বিষয়ে অবশ্যই অবগত থাকতো। কারণ এটা তো গোপন করার মতো কোন বিষয় না।’
তাহলে কারা এই লিফলেট বিলি করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
একই বিষয়ে নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় র্যাবের সাথেও। র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, ‘তামিম ও জিয়ার তথ্য দিয়ে এমন লিফলেট বিলি করার প্রশ্নই আসে না। কারণ তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় সকল টেলিভিশনে সে তথ্য প্রচারও হয়েছে। র্যাব এমন লিফলেট বিলি করার কোন নির্দেশনা দেয়নি।’
প্রসঙ্গত, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় হামলার মাস্টার মাইন্ড সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ও তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ইতিমধ্যেই ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
শুধু তাই নয় সম্প্রতি জিয়া ও তামিমের সম্ভাব্য নতুন চেহারার পাঁচটি ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। গ্রেফতার এড়াতে জিয়া-তামিম নিজেদের চেহারা পাল্টে ফেললেও তাদের সম্ভাব্য চেহারা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে জনসাধারণকে ধারণা দিতেই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
মেজর জিয়াউল হকের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নে। মেজর জিয়া এক সময় বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার ৯ নম্বর সড়কের ৫১২ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকতেন। তার বাবার নাম সৈয়দ জিল্লুর হক। তিনি সত্তরের দশকে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে যান। তার বাবা দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থান করেন। জিয়া দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। তার পাসপোর্ট নম্বর— এক্স-০৬১৪৯২৩।
আর তামিম আহমেদ চৌধুরীর বাবার নাম শফিক আহমেদ চৌধুরী এবং মা খালেদা শফি চৌধুরী। তার স্থায়ী ঠিকানা সিলেটের বিয়ানি বাজার থানার দোবাক ইউনিয়নের বড়গ্রাম সাদিমাপুর। তামিমের বর্তমান পাসপোর্ট নম্বর এএফ-২৮৩৭০৭৬ ও পুরান পাসপোর্ট নম্বর এল-০৬৩৩৪৭৮। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর- ১৯৮৬০০৯১২৪১০০১৩৪২। ১৯৮৬ সালের ২৫ জুলাই তার জন্ম। তামিম সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর দুবাই থেকে ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এসজি