
ঢাকা: গুলিতে আহত হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের কোমর থেকে রশি (দড়ি) ও হাতকড়া খুলে দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।
এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন হাই কোর্টে জমা দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের।
একই সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসার সময় হাতকড়া পরিয়ে রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজি), ঢাকার পুলিশ কমিশনার, রংপুরের ডিআইজি, গাইবান্ধার পুলিশ সুপারসহ পাঁচজনকে উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে আহত তিন সাঁওতালকে কোমরে দড়ি বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করার পর ওই সংবদ সংযুক্ত করে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নিজেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও সাঁওতালদের সংঘর্ষ থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
ওই ঘটনায় আহত তিন সাঁওতালকে হাসপাতালে হাতকড়া পরিয়ে রাখার খবর রোববার সংবাদ প্রকাশ পায়। ওই প্রতিবেদন সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া রিট আবেদন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলিতে আহত চরণ সরেন ও বিমল কিসকোকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দ্বিজেন টুডুকে ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশি পাহারা থাকার পরও কোমরে দড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে তিনজনকেই।
এই সাঁওতালদের অভিযোগ পুলিশের সহায়তায় বাবা-দাদার ভিটা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঘরের মালামাল বের করতে না দিয়ে লুটপাট চালিয়ে আগুন দেয়া হয়েছে ঘরে। প্রতিবাদ করায় পুলিশ চালিয়েছে গুলি।
চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দেয়।
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল।
প্রতিবেদক: ফায়েজ, সম্পাদনা: জাহিদ