
মনিরুল ইসলাম, গাজীপুর ঘুরে এসে;
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে তৃণমূলে বেশ আলোড়ন দেখা গেছে গাজীপুর ও বরিশালের দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশাল ও গাজীপুরের প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন। বরিশালে তৃণমূল আওয়ামী লীগ মিছিল দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করছে এবং কেউ কেউ বলছেন, সভানেত্রীর এমন সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পর আবার বরিশাল স্বাধীন হল।
গাজীপুরের চিত্র ভিন্ন । সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তৃণমূলে পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ। তৃণমূলের পছন্দ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছাতে গাজীপুর আওয়ামী লীগের একাংশ ঈদ যাত্রা বন্ধ করে রাস্তায় মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নেওয়ার কালে জাহাঙ্গীরই তাঁদের এমন কর্মাকান্ড থেকে বিরত রাখেন, এবং দলীয় সিদ্ধান্তে শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ করেন বলে সেসময় সেখানে উপস্থিত গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জেষ্ঠ্য নেতা নিশ্চিত করেছেন।

সাবেক কাউন্সিলর জিল্লুর রহমান মুকুল বলেন, ‘ দল রাজনীতি বা বৃহত্তম স্বার্থ আসলে ঠিক জানি না আমরা, তবে আপনাদের প্রতি অনুরোধ আমার নেতা গাজীপুরের মাটি মানুষের সন্তান জাহাঙ্গীর আলমের কোনো বিকল্প নাই, এই কথাটা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছান, স্বাধীনতার পর আহসানউল্লাহ স্যার আর জাহাঙ্গীর ভাই ছাড়া গণমানুষের এত ভালোবাসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কেউ পায়নি’।
স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন নাকি করবেন না সে সিদ্ধান্ত কিছুটা দোদুল্যমান হলেও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার সামনে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গাজীপুর সিটির ৩১ নাম্বার ওয়ার্ডের তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন। জাহাঙ্গীর ভাই নির্বাচনে আসবেন এবং দলমত নির্বিশেষে গাজীপুরের মানুষ গাজীপুরের মাটি মানুষের সন্তানকে ভোট দিবে, তিনি আরও যোগ করেন।
দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ঘোষণার পর গণমাধ্যমকে জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘ আমি গাজীপুরের সন্তান, গাজীপুরের ভোটাররা, গাজীপুরের জনগণ যদি চায়, আমি তাদের পাশে থাকব।’ তখনই তাঁর কথ্যয় স্বতন্ত্র নির্বাচনের আভাস পাওয়া যায়।
টঙ্গী স্টেশন রোডে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে কথা হয় গাজীপুরের স্থানীয় একজন নাট্যকর্মীর সাথে ‘ অশ্রুসজল জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুরবাসি অন্তত দু’বার দেখেছে। নিকটবর্তী অতীত নয় বলে ভুলে যাওয়ার কথা, ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটির নির্বাচনে অপ্রতিহত জনসমর্থন নিয়েও দলের সিদ্ধান্তে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন দলের বৃহত্তম স্বার্থে। একজন তুমুল জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি কি দলের বৃহত্তম স্বার্থের বাইরে? জনগণের আস্থার জায়গা থেকে সড়ে গিয়ে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয় সেখানে তৃণমূলের ইচ্ছার বা পছন্দের কী ভিত্তি নেই ?
বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কতটুকু নির্বাচনের মাঠে থাকতে পারবেন তিনি, এমন প্রশ্নে ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমান বলেন; ‘ বিদ্রোহী কেন হবে, যেহেতু বিরোধীদল নির্বাচনে আসবে না তাহলে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যেই একটা পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে, ভোটাররা কাকে ভোট দিবে’। মৃদু হেসে তিনি বলেন দলের ৮৫% আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী তাকেই ভোট দিতে চায়। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এবার কিন্তু সবাই এখন জাহাঙ্গীর ভাইয়ের জন্যই ভোট চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে’ জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, ‘ তৃণমূলের মনে একটা বিশেষ স্থান সংরক্ষিত জাহাঙ্গীর আলমের জন্য, টানা ৩ বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এখন দৃশ্যমান, সেই সময়টুকু তো সবারই প্রাপ্য’।
স্বতন্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে তেমন বিপত্তির আভাস না থাকায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আজমতউল্লাহ খানের জন্য আগামী নির্বাচন আরও কঠিন হবে বলে ভাবছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা, এমনকি বিরোধীদল না থাকলে বড়দল গুলোকে স্বতন্ত্র পার্থীর ক্ষেত্রে আতীতেও নমনীয় দেখে গেছে।