
মাসকাওয়াথ আহসান:
সৌদি যুবরাজের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যেতে থাকে। সাংবাদিক খাস্তোগি হত্যাকাণ্ড সৌদি রিমান্ডে ঘটেছে; এ খবর চাউর হবার পর; পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো সৌদি যুবরাজের স্বৈরাচারি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
সৌদি যুবরাজ অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। সৌদি আরবের ইসলাম ধর্মের ঠিকাদাররা আগে থেকেই সৌদি যুবরাজের ওপর ক্ষেপে আছে। তিনি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ায় ইসলাম ধর্মের ঠিকাদাররা বিক্ষুব্ধ। যুবরাজকে তারা “কাফের” বলে অভিহিত করেছে।
যুবরাজ ভাবেন, একই সঙ্গে পশ্চিমের চোখে “ফ্যাসিস্ট” আর স্বদেশী ধর্মের ঠিকাদারদের চোখে “কাফের” হওয়ার চেয়ে বড় বিপদ আর কীই বা হতে পারে!
যুবরাজ যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন; তখন একজন রাজ-অমাত্য এসে খবর দেয়, যুবরাজ, শুণ্ডি রাজ্যের রাজা আপনার দর্শনপ্রার্থী।
যুবরাজ একটু বিরক্ত হন, শুণ্ডি রাজ্যের রাজা কী পারবে আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে! এখন তার সঙ্গে দেখা হওয়া সময়ের বড্ড অপচয়।
–যুবরাজ; যেখানে দেখিবেন ছাই, উড়াইয়া দেখিবেন তাই;পাইলেও পাইতে পারেন অমূল্য রতন। ভিলেজ পলিটিক্সে শুণ্ডি রাজার নাম হয়েছে আজ; লোকে বলে তিনি নাকি সত্যবান জাদুরাজ।
–তবে আর দেরি কেন; ডেকে আনো তারে; কালাজাদুর সাহায্য যদি কিছু করে।
শুণ্ডিরাজ প্রবেশ করতেই যুবরাজ উষ্ণ সম্ভাষণ জানিয়ে বলেন, আসুন মহারাজা সত্যবান; আপনি ছাড়া কে আর বাঁচাবে এই প্রাণ।
শুণ্ডিরাজ ধমক দিয়ে বলেন, এতো ভয়ের কী আছে শুনি; এখনই এতো ঘাবড়ে যেওনা গুণী।
সৌদি যুবরাজ বলেন, মহাত্মা সত্যবান; খাস্তোগি হত্যাকাণ্ডে পশ্চিমারা পেয়েছে মানবাধিকার হননের ঘ্রাণ।
শুণ্ডিরাজ হাসেন, এতোদিন তোমার রাজ্যে পাঠিয়েছি দাস; এবার পাঠাবো কিছু চলন্ত ইতিহাস!
যুবরাজ বলেন, একটু যদি খোলাসা করেন মহারাজ।
শুণ্ডিরাজ সত্যবান হাত দুটো ওপরে তুলে শূন্যে মুঠো পাকিয়ে সৌদি যুবরাজের হাতে দিয়ে বলেন, দিলাম তোমায় সত্যের বর। এখন পৃথিবীর সব সত্যই তোমার অনুচর। এখন সেই সত্য যা রচিবে তুমি।
সত্যবানের ইশারায় এগিয়ে আসেন এক পণ্ডিত। সহাস্যে বলেন, আমি “ইতিহাস”। পশ্চিম যখন আপনার দিকে মানবাধিকার হননের অভিযোগ তুলেছে; আপনি তখন পশ্চিমের অন্ধকার যুগ; উপনিবেশবাদ; দাস-নির্যাতন আর বর্ণবাদের ইতিহাস মনে করিয়ে দেবেন। অতীতই হবে আপনার বর্তমানের ঢাল।
যুবরাজের খুব পছন্দ হয় এই “ইতিহাসের ঢাল”। তিনি জানতে চান, কিন্তু দেশের ধর্মের ঠিকাদারদের নিয়ে কী করি!
শুণ্ডিরাজ মুচকি হাসেন, ওদের মধ্যে দুটো ভাগ করে দাও। একদল “সন্ত্রাসী” আর একদল “আলেম”। সন্ত্রাসীদের জুজুটাতে দেশের মানুষ থাকবে সুখে। এলিট ফোর্সের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের “টম এণ্ড জেরি” খেলায় সবাই মত্ত হয়ে যাবে। আর “আলেম”দের মোটা অংকের নজরানা দিয়ে “ধর্মে”র সত্যটাকে নিয়ে এসো তোমার হাতের মুঠোয়।
যুবরাজ কৃতজ্ঞ চোখে বলেন, মহারাজ সত্যবান! আমার আছে তেলের খনি; আর আপনার আছে সত্যের খনি। আমি তেল দিয়ে সত্য নিতে পারি কী কিছু!

লেখক: ব্লগার ও প্রবাসী সাংবাদিক