
নয়াদিল্লি: চলতি বছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও ভারতের বিহার রাজ্য ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। উজানের দেশ নেপাল থেকে ছেড়ে দেয়া পানি এই বন্যার জন্য দায়ী করা হলেও মূলত প্রতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশের বাঁধ ব্যবস্থাপনার ত্রুটিই এই বন্যার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিগত চারদিনে বন্যা পরিস্থিতির এতোটাই অবনতি ঘটেছে যে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার গত মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লিতে ছুটে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি এই বিষয়ে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এবং পলি ব্যবস্থাপনার উপর জাতীয় নীতি তৈরি করে এর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চান।
পরিবেশবিদ ও পানি সংরক্ষণবাদী হিমাংশু ঠাক্কর জানান, পলি ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতীয় কোনো নীতি না থাকায় পরিস্থিতির এতোটা অবনতি হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের ফলে পানি নিষ্কাশনে বাধা প্রাপ্তি এবং গঙ্গার মধ্যে জমা পলির কারণে বিহারে চলতি বছর এই দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বিহারের জন্য ফারাক্কা বাঁধের ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এক স্মারকলিপিতে তিনি বলেন, ‘গঙ্গায় বন্যা সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ ফারাক্কা বাঁধ। এটি নির্মাণের ফলে নদীতে ব্যাপক হারে পলি জমতে শুরু করে। এই বাঁধের প্রয়োজনীয়তা পুনরায় মূল্যায়নের দরকার। এটি নির্মাণের ফলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হচ্ছে।’ তাই এই বাঁধ অপসারণের জন্য তিনি কেন্দ্রের বিবেচনা প্রত্যাশা করেন।
একচল্লিশ বছর আগে গঙ্গার উপর যখন ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়, তার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, পানি প্রবাহের একটা অংশকে হুগলী নদীতে চালিত করে কলকাতা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করা।
কিন্তু উদ্দেশ্যটি পুরোপুরি সফল না হলেও ফারাক্কার কারণে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে, তার জেরে প্রতি বছরই বর্ষার মৌশুমে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগে নদীর প্রবাহে ভেসে পলি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের কারণে সেই পলি নদীর বুকে জমা হয়ে বন্যার সৃষ্টি করছে।
এছাড়া মধ্যপ্রদেশের বানসাগর বাঁধ খুলে দেয়ার কারণেও বিহার এবং উত্তর প্রদেশের কিছু অংশে বন্যা হচ্ছে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিবিসি
প্রতিবেদন: ফারহানা করিম, সম্পাদনা- জাহিদুল ইসলাম