
ঢাকা: সরকার দলীয় ক্যাডার দ্বারা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট লুটের ব্যবস্থা করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
তিনি বলেন, ভোট নেয়ার জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে সরকারদলীয় ক্যাডারদের। নির্বাচনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে একসময়ের ছাত্রলীগ করা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নাসিক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কী না এই প্রশ্নটি এখন মানুষের মুখে মুখে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে দলবাজ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজ থেকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ প্রশাসন সাজানোর আহবান জানালেও নির্বাচন কমিশন সেটিকে আমলে নেয়নি।
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে ভোটাররা সঙ্কিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই মানুষের মাঝে একধরণের আশঙ্কা ও অস্বস্তি ঘনীভুত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে উৎকণ্ঠিত। মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এমন পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। নারায়ণগঞ্জবাসীর একটাই প্রশ্ন-তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে ভোট দিতে পারবে কী না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন বসানো থেকে শুরু করে নির্ভয়ে ভোট দেয়ার নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের পরিবর্তে প্রশাসনে দলবাজ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে নির্বাচনী কাজ।
সেনা মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনা মোতায়েনের যৌক্তিক দাবিকে সিইসি উড়িয়ে দিয়েছেন। সন্ত্রাসকবলিত নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের হাতে যে বিশাল বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডার রয়েছে তা উদ্ধার কিংবা জমা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি নির্বাচন কমিশন। এমনি এক বিরুপ পরিবেশে কীভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সেটি নিয়ে জনমনে যে অনিশ্চয়তার জন্ম হয়েছে সেটি কোনভাবেই দুরীভূত হচ্ছে না। কারণ আওয়ামী লীগ ও তাদের পছন্দসই নির্বাচন কমিশনের অধীনে পূর্বের সকল নির্বাচন হয়েছে রক্ত আর লাশের ওপর। ভোটারবিহীন সরকারের অধীনে বিগত সকল নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটের পূর্বের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি, ভোটারদেরকে ভোট প্রদানে বাধা, বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ভোটকেন্দ্রগুলোতে রক্তাক্ত খুনের উৎসব চলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান নাসিক নির্বাচনে সেটিরই প্রতিফলন ঘটবে কী না তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দানা বাঁধছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে আবারো নাসিক নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরীর জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা ও ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তার জন্য আবারো সেনা বাহিনী মোতায়েনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের ভয়াবহ দু:শাসন, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, মামলা-হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ধানের শীষের পক্ষে জনগণের রায় প্রদত্ত হবে। ভয়ঙ্কর সরকরি অনাচার আর গণতন্ত্রশূন্যতায় বন্দী দেশবাসীকে মুক্ত করার প্রতিবাদী জনগণের প্রত্যয়-দৃঢ় অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জবাসী আগামী ২২ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে। যদি মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে দু:শাসনের বিরুদ্ধে এক বিশাল নীরব বিপ্লব ঘটে যাবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার কাছে থেকে বিএনপি কি শিখবে। একজন রাজনৈতক ব্যক্তির কন্যা হয়ে তার মুখের ভাষা এতো অশোভন কেন? তিনি কিভাবে এতো নোংরা ভাষায় কথা বলতে পারেন। আমারা আপনার কাছে কি শিখবো কিভাবে প্রতিপক্ষকে নোংরা কথা বলা যায়।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি দেশকে বিক্রি করতে চায় না বরং আপনারাই দেশকে বিক্রি করেছেন। ভারতের কাছে বাংলাদেশের আকাশ সীমা বিক্রি করেছেন। বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট দিয়েছেন।
তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আপনারা তো মিথ্যা কথা বলে ক্ষমতায় আসেন কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে ক্ষমতায় থাকতে হয় তা শেখালেন।
জনগণের উপর আওয়ামী লীগের কোনো আস্থা নেই। শেখ হাসিনার আস্থা আছে র্যাব-পুলিশের ওপর।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহদপ্তর মনির হোসেন ও বেলাল আহমেদ প্রমুখ।
প্রতিবেদন: শেখ রিয়াল, সম্পাদনা: মাহতাব