
শরীফ খিয়াম, ঢাকা: দেশের সাড়ে ছয় কোটি শিশুর মধ্যে দুই কোটি ৬৫ লাখ, অর্থাৎ ৪৬ শতাংশ শিশু জাতীয় দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার বিবেচনায় যার পরিমাণ তিন কোটি ২০ লাখ, অর্থাৎ ৫১ শতাংশ। এমন পরিসংখ্যান হাতে নিয়েই শিশুবান্ধব বাজেট প্রনয়ণের কথা ভাবছে সরকার।
সংসদে উত্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সাথে সংযুক্ত এক বইতে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বছরের শিশু বাজেট সংক্রান্ত এ প্রকাশনাটির নাম দেয়া হয়েছে ‘বিকশিত শিশু : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
দেশে বিগত দেড় দশকে অর্থনৈতিক বৈষম্য ‘বিপুলভাবে’ কমেছে উল্লেখ করে অর্থ বিভাগ প্রকাশিত বইটির ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও শিশুরা প্রতিনিয়ত নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীস হচ্ছে, যা সক্ষম নাগরিক হিসেবে তাদের ভবিষ্যতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ এখানে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের শিশুরা শ্রম, বাল্যবিবাহ, উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার অভাব, অপুষ্টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার উচ্চ হার, সহিংসতা ও নির্যাতন- ইত্যাদি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
দেশে ‘শিশুকেন্দ্রীক বাজেটের বুনিয়াদি কাঠামো এখনো তৈরী হয়নি’ – উল্লেখ করে প্রকাশিত বইটিতে বলা হয়েছে, ‘ভোটাধিকার না থাকলেও শিশুরা সমঅধিকারে দেশের নাগরিক, জাতির সামষ্টিক ভবিষ্যত। ফলে বাজেট প্রণয়নকালে শিশুদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি সমান গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তবে সার্বিকভাবে শিশুকেন্দ্রীক বাজেট এখনো একটি নতুন ধারণা এবং বাংলাদেশের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন।’
অর্থ বিভাগ দাবি করেছে, শিশু অধিকার ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন হচ্ছে এই প্রকাশনা। মন্ত্রণালয়, বেসরকারি সংস্থা ও ইউনিসেফের পরামর্শ নির্ভর এ বইটির ‘বাংলাদেশে শিশু-কেন্দ্রীক বাজেটের যৌক্তিকতা’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শিশুদের জন্য বিনিয়োগ দারিদ্র্য বিমোচন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি জোরদার করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।’
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের তূলনায় আসন্ন বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিশুকেন্দ্রীক বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে শিশুসম্পৃক্ত প্রধান ছয়টি মন্ত্রণালয় ও একটি বিভাগ নতুন বাজেটে ২২ শতাংশ বেশি বরাদ্দ চেয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ; সাথে আছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। শিশু উন্নয়ন জোরদারে বর্তমান সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ‘সোস্যাল অডিটিং’ ও ‘সোস্যাল ইনটেলিজেন্স রিপোর্টিং’ এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করানোর ব্যবস্থা করবে বলেও বইয়ে উল্লেখ রয়েছে।
আলাপ হচ্ছিলো কয়েকজন অভিভাবকের সাথে। শিশুদের ব্যাপারে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের এমন এই ‘ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছেন রাজশাহীর সফুরায় বসবাসরত স্থপতি চৌধুরী। পয়ত্রিশোর্ধ্ব নেভিল দুই শিশুর পিতা। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী শিশুদের ব্যাপারে আমার মত হচ্ছে প্রথমে তাদের খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে শিক্ষা, উন্নতি কিছুই – মাথায় ঢুকবে না। এরপর তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হবে। যাতে তারা যে কোনো অবস্থাতেই অপরাধপ্রবণ হয়ে না ওঠে।’
ঢাকার মোহম্মদপুরে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাসরত কবি ও সাংবাদিক সাঈফ ইবনে রফিক বলেন, ‘বই, কাগজ, কলম, খাতার দাম বাড়িয়েও সরকার বলতে চায় এই বাজেট শিশুবান্ধব। মূলত সরকারের এমন দাবিও শিশুতোষ।’ দারিদ্র্যে বেড়ে ওঠা শিশুদের ব্যাপারে আলাপ করতে গিয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি ব্যাপারে খেদ ঝেড়ে তিনি বলেন, ‘কবে দেখবেন জানি কে বলছে – গরিব হয়ে কেন শিশু জন্ম দিলো? ওদের ট্রাইবুনালে বিচার হওয়া উচিত। অথবা একটা ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামের আওতায় টিকার বদলে বিষ দিয়া সব দরিদ্র শিশুকে হত্যা করা উচিত। এতে জাতির অনেক মঙ্গল হবে।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এসকে/জাই