
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ইক্ষু খামারের জমিতে কাঁটাতারের বেড়া ভেতরে রোপা আমনের খেত। স্বর্ণা জাতের ধান রোপণ করা হয়েছিল ১৩৫ একরে। ফলন ভালো হলেও সেই ধান তোলা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে সাঁওতালদের মধ্যে।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেখানকার প্রায় আটশ একর জমিতে তাদের ফলানো মাস কালাই, সরিষা ও পাট লুট হয়েছে। আছে কেবল এই ধান। সেই ধান চলে গেল কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে।
গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর গ্রামের ইলিমা টুডু বলেন, সাঁওতালরা একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন। সেই জমি থেকে যখন উচ্ছেদ করা হয়, তখন ধান ছাড়া সব ফসল লুট হয়ে গেছে।
জমি থেকে তাদের উচ্ছেদের পরদিন থেকে ইক্ষু খামার এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। তার ভিতর রয়েছে সাঁওতালদের চাষের ধান। এখন কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ওই জমিতে ঢুকতে পারছেন না সাঁওতালরা।
সহায়-সম্বলহীন সাঁওতালদের ধান তুলে আনার সুযোগের দাবি জানিয়ে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, জমি থেকে উচ্ছেদের পর সেখানে পুলিশ প্রহরা ও কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। তারপরও সেখান থেকে মাস কালাই ডাল ও সরিষা লুট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জমিতে থাকা ধান সাঁওতালদের কাটতে দিতে হবে। আগামী ১০-১২ দিনে মধ্যে না কাটলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
উচ্ছেদের কারণে সাঁওতালদের কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সদস্য ভুপেন মারডি বলেন, ফার্মের জমি চাষের জন্য আনা ১৬টি শ্যালো মেশিন এবং নয়টি পাওয়ার টিলার লুট হয়েছে ওই দিন। এসবের অনেকগুলো ভাড়া করা ছিল। এখন মালিকদের এসব কোথা থেকে এনে দিবে গরীব সাঁওতালরা, সে চিন্তায় তাদের ঘুম নেই। আপাতত জীবন চালিয়ে নেওয়ার জন্য ধানগুলো ঘরে তোলার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
রংপুর চিনিকলের উপ-মহাব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেছেন, এসব জমির ধান কে কাটবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
গত সোমবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ ফিরিয়ে দিলেও বুধবার মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামের সাঁওতালরা সরকারি ত্রাণ নিয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুপুরে দুই গ্রামের ১৫০ পরিবারকে ২০ কেজি চাল, ১ লিটার তেল, আধা কেজি ডাল, ১ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ ও ২টি করে কম্বল দেওয়া হয়। দুপুরে মাদারপুর-সংলগ্ন ছোট জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের সামনে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১৯৬২ সালে আখ চাষের জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ১ হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ওইসব জমিতে মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষ না করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর কাছে লিজ দেয়। এরপর ওইসব জমিতে তামাক, ধান, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়। এরপর চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। মিলের জমিতে আখ চাষ না হওয়ায় দুই বছর আগে বাপ-দাদার জমি ফেরত দেয়ার কথা বলে প্রভাবশালী নেতারা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজনকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে। গত ৬ নভেম্বর পুলিশ-ইক্ষু শ্রমিক ও সাঁওতালদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে দুই সাঁওতাল নিহত হয়। আহত হয় পুলিশসহ ৩০ জন। তবে সাঁওতালদের মতে, নিহত ৩ এবং নিখোঁজ ৮ জন। এরপর ওই এলাকায় সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: জাবেদ চৌধুরী