
সৈয়দ ইফতেখার আলম,ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বাকরখানি এখন নতুন ঢাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহত্তর মিরপুরে গড়ে উঠেছে বাকরখানির দোকান। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
সকালে কিংবা বিকালে চায়ের সঙ্গে এক পিস বাকরখানি যেন অমৃত। এমনটাই জানালেন আগারগাঁও তালতলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাকরখানি দোকানের এক ক্রেতা। পেশায় ব্যাংকার এই ক্রেতার নাম মাহফুজুর রহমান। অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে প্রায়শই তিনি বাকরখানি কিনে নিয়ে যান।
‘বিস্কুটের চেয়ে বাকরখানি অনেক ভালো খাবার। ময়দা দিয়ে তৈরি এই খাবার খেতেও সুস্বাদু, মানেও ঠিকঠাক,’ বলেন তিনি। এছাড়া শিশুরাও পছন্দ করে বলে মত দেন তিনি।
মিরপুরে তালতলা ও শেওড়াপাড়ায় দুটি বাকরখানির দোকান রয়েছে। যদিও এটির মালিকানা একই ব্যক্তির। দক্ষিণের নাজিমউদ্দিন রোড থেকে উত্তরে গত কয়েক বছর আগে দোকান স্থানান্তরিত হয়। তালতলা দোকানে কারিগর আলম মিয়া। তার সহযোগী তিনজন। এছাড়া আরো একজন রয়েছে নাম, ইনতাজ; তিনি সহকারী।
আলম মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নতুন ঢাকায় তাদের ব্যবসা সম্পর্কে। ‘অনেকে চেনে-জানে আবার অনেকে চেনে না। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে- এটা কী। আমরা তখন বুঝিয়ে বলি। পছন্দ হলে নেয়, পরে খেয়ে ভালো লাগলে নিয়মিত ক্রেতা হয়ে ওঠে। ২০১১ সাল থেকে এই দোকানটি চলছে। এতো বছরে মোটামুটি পরিচিতি পেয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো যাচ্ছে,’ বলেন আলম মিয়া।
দুই ধরনের বাকরখানি বিক্রি হয়। একটি মিষ্টি অন্যটি নোনতা। ১৪০ টাকা কেজি মিষ্টি এবং নোনতাটা ১২০। এছাড়া খুচরা পাঁচ টাকা পিস হিসেবেও বিক্রি হয়।
শেওড়াপাড়ার মূল কারিগর শাকিল জানান, তার শাখাতেই বিক্রি বেশি হয়। দৈনিক তিন হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। তালতলার শাখায় খানিকটা ১৯/২০।
দীর্ঘদিন ধরে দুটি দোকান পরিচালিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে নিয়মিত বাকরখানি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। বান্ধা কাস্টমারও বনে গেছেন কেউ কেউ, জানান তিনি।
যদিও আগেকার আমলে বাকরখানি তৈরি হতো ঘি এবং মাখন দিয়ে। যার স্বাদ ছিল অতুলনীয়। তবে এখনকার বাকরখানিতে এসব নেই, তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতিতেই যেন শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে যান।
ইতিহাসবিদ, শিক্ষক মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘ঢাকা স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী’ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, বাকরখানির কথা। ‘আগা বাকের সুবেদার মুর্শিদকুলি খানের মেয়ের জামাই ছিলেন। আগা বাকেরের প্রেম ছিল খনি বিবির সাথে। তবে খনিকে হত্যা করা হয়। দুজনের প্রেম কাহিনীকে জীবিত রাখতে আগা বাকেরের প্রিয় রুটির নামকরণ হয় বাকরখনি। পরে তা পরিবর্তিত হয়ে বাকরখানি হয়েছে।’
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: জাই