
নরসিংদী : নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ছয় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। ইউপি নির্বাচনী বিরোধের জের ধরে পুলিশ টহলের মধ্যেই গতকাল সোমবার দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় পাঁচ শতাধিক ককটেলের। এসময় উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- নিলক্ষা ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের আলতাফ মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (২৫), সোনাকান্দি গ্রামের আরব আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৪০), মঙ্গল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (২৫) ও নিলক্ষা গ্রামের আ. সালামের ছেলে শাহাজাহান মিয়া (৪০)। নিহতদের সবাই ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হকের সমর্থক। নিহতদের মধ্যে শাহজাহান মারা যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অন্যরা ঘটনাস্থলে নিহত হন।
এছাড়া সংঘর্ষে ওসি আজহারুল ইসলামসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আহত গ্রামবাসীর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ফরিদ মিয়া (৩৫), রাকিব (১৬), সিপন (১৮), টেটাবিদ্ধ শামিম (২০), রোজি বেগমকে (২৮) নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংঘর্ষের পর ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ১০ বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত ইউপি নির্বাচনের পর নিলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। দুই গ্রুপের মধ্যে ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। থানায় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দুগ্রুপের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধ, ককটেল বিস্ফোরণ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। গত শনিবার সন্ধ্যায় উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এর জের ধরে রোববার দিনভর ইউনিয়নের চার গ্রামজুড়ে দুগ্রুপের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধ, শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। আরও সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ। এর মধ্যেই দাঙ্গাবাজ উভয় গ্রুপ সোমবার সকাল থেকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। দিনভর সংঘর্ষ চলাকালে পাঁচ শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট, গ্যাস গান, সাউন্ড বুলেট ও টিয়ারসেল ছোড়ে।
রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট, গ্যাস গান, সাউন্ড বুলেট ও টিয়ার সেল ছুড়তে হয়েছে। এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসপি আমেনা বলেন, এ ঘটনায় অন্তত ৩০ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্য, সারাদেশে ইউপি নির্বাচন ও নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষে ১১৩ জন খুন হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করে আসছে। এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষে ১০ হাজার আহত হয়েছে।
সম্পাদনা: জাবেদ চৌধুরী