
ডেস্কঃ সংগ্রাম, বিপ্লব আর দ্রোহের কবি নাজিম হিকমত। জীবনের অধিকাংশ সাহিত্যকর্মই যার রচিত হয়েছে জেলখানার বন্দীদশায়। ক্ষুধা, অনশন, মৃত্যু, বিপ্লব আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তার কবিতাজুড়ে রইলেও, অনেকের কাছেই তিনি রোমান্টিক কমিউনিস্ট; ভালোবাসতে কখনোই ভুলে যাননি তিনি। প্রয়াণ দিবসে বিশ্বখ্যাত এই তূর্কী কবি ও নাট্যকারের তিনটি প্রেমের কবিতার অনুবাদ রইলো আজকের আয়োজনে।
তুমি আমার মাতলামি
তুমি আমার মাতলামি-
যা সামলাতে পারিনি আমি,
সামলাতে আমি পারতাম না, তা নয়
কিন্তু আমি চাইনি নেশা কেটে যাক, এই যা।
মাথাটা ধরে আছে, হাঁটু ছড়ে-ছিলে একাকার
কাদা লেপ্টে রেখেছে আমার শরীর
তোমার দ্বিধান্বিত আলোর দিকে হাঁটতে আমি সংগ্রাম করি।
তোমায় ভাবা
ভাল লাগে তোমার কথা ভাবতে, আশাবাদী সব স্বপ্ন
মনে হয় যেন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর কন্ঠে
সবচেয়ে চমৎকার গানটি শুনছি
কিন্তু আশা আর আমায় পরিপূর্ণতা দেয় না
গান শুনতে চাই না আর ইদানিং
আমি গাইতে চাই।
আমি তোমার আগে মরতে চাই
আমি
তোমার আগে মরতে চাই।
কি মনে হয় তোমার?
পরে মৃত্যুবরণ করে খুঁজে পাওয়া যায় সঙ্গীকে?
যে সঙ্গীটি মারা গিয়েছিল আগেই?
আমার মনে হয়- না।
এর চেয়ে ভালো হয় যদি
তুমি আমায় পুড়িয়ে ফেলো,
তারপর আমার ছাই কৌটাবদ্ধ করে
ঘরের চুল্লীতে রেখে দাও কৌটাটি।
কৌটাটি হতে হবে কাঁচের,
স্বচ্ছ, সাদা কাঁচ
যার ভেতরে দেখা যাবে আমায়…
যার ভেতরে দেখা যাবে আমার বিসর্জন :
ধরণীর কোন অংশে রূপান্তরিত না হয়ে
কোন সুগন্ধি ফুলে রূপান্তরিত না হয়ে
আমি ধুলোমাখা ছাই হয়েছি,
শুধু তোমার পাশে থাকার জন্য,
তোমার সাথে থাকার জন্য।
পরে, তুমি যখন মারা যাবে
চলে এসো আমার কৌটায়।
আমার ছাইয়ের মাঝে তোমার ছাই,
আমরা সেখানে একসাথে থাকবো
যতদিন না পর্যন্ত কোন উদাসীন নববধূ
অথবা কোন অবিশ্বাসী নাতি-নাতনি
আমাদের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে…
কিন্তু আমরা
তার আগ পর্যন্ত
মিশতে থাকবো
একে অপরের সাথে
এতটাই মিশে যাবো যে
যে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলা হবে আমাদের
সেখানে আমাদের দানাগুলো থাকবে পাশাপাশি।
আমরা একত্রে ঝাঁপ দেবো মাটিতে।
কোন একদিন, যদি কোন বন্য ফুলগাছ
সে মাটি থেকে সার নিয়ে বেড়ে ওঠে
সে গাছের ডগায়, অবশ্যই
ফুটবে দুইটি ফুল:
যার একটি তুমি
অন্যটি আমি।
আমি
মৃত্যুর কথা ভাবি না।
আমি জন্ম দিতে চাই একটি মানবশিশু।
জীবন ঝরে যাচ্ছে আমার থেকে।
টগবগ করছে রক্ত।
আমি বাঁচবো, বহু দিন,
কিন্তু তোমার সাথে।
মৃত্যুও আমাকে ভীত করে না আর
কিন্তু গতানুগতিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিন্তায়
আমার গা গুলিয়ে ওঠে।
মৃত্যুর আগে
হয়তো এসব ভয় কাটিয়ে উঠবো আমি।
জেল থেকে মুক্তির কোন আশা কি আছে আদৌ?
আমার ভেতর থেকে একটি কণ্ঠ বলে ওঠে:
হয়তো।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকে/এসজি