
ইয়াসিন রানা: নারী ক্ষমতায়নে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রোল মডেল এবং অন্য দেশ গুলোকে নেতৃত্ব দিলেও এ বিষয়ে কোন ধরণের কর্মসূচি বা কর্ম-পরিকল্পনা নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মহিলা অঙ্গসংগঠনগুলোর।
যে কোন কাজের জন্য তাদের একমাত্র ভরসা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ যেন বাতির নিচেই অন্ধকার।
নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বের অনেক দেশের চাইতে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে থাকলেও ক্ষমতাসীন দলটির মহিলা অঙ্গসংগঠনের এ বিষয়ে বলার মত কোন কর্মসূচি বা কর্ম-পরিকল্পনা নেই।
আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘আমাদের নারী অঙ্গসংগঠনগুলোর কাঠামো অন্যান্য অঙ্গসংগঠন থেকে অনেক দূর্বল। তাই আমরা দল গোছানোর কাজেকেই বেশি প্রধান্য দিচ্ছি। কারণ সংগঠন যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে কোন কর্মসূচি হাতে নিয়ে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারবো না।’
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দু’টি মহিলা অঙ্গসংগঠন হচ্ছে মহিলা লীগ এবং যুব মহিলা লীগ। এছাড়া মহিলা শ্রমিক লীগ নামে আরেকটি সংগঠন রয়েছে। নারী ক্ষমতায়ন ও অধিকার রক্ষায় কেমন কর্মসূচি পালন করছেন এবং সামনে কী কর্মসূচি রয়েছে এ বিষয়ে কথা বললে ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা ও যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের কথায় মন্ত্রণালয়ের দারস্ত হওয়ার কথাই উঠে আসে।
বিভিন্ন বিষয়ে তাদের একই কথা, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সাথে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখি এবং আমাদের পরামর্শ মতো মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সংগঠনগুলোর সক্রিয় অবস্থান থাকলেও নারী অধিকার রক্ষায় কেবল একটাই ভরসা মন্ত্রণালয়।
তবে তারা জানান, আমাদের নারী সংসদ সদস্যরা ও স্থানীয় নেত্রীরা তাদের ডিসি, এসপি, থানার ওসিদের সাথে নারী অধিকারের বিষয়ে নিয়মিত মতবিনিময় করেন। তবে দল হিসেবে দলীয় সভায় নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা এবং বিশেষ দিবসে আলোচনার আয়োজন ছাড়া কোন সৃজনশীল কর্মসূচি নেই সংগঠনগুলোর। এছাড়া বিভিন্ন দূর্ঘটনা যেমন রানা প্লাজা ট্রাজেডি, টাম্পাকো দূর্ঘটনাতেও নারী শ্রমিকদের খোঁজ নিতে দেখা যায়নি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।
এ নিয়ে মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথি নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘নারী শ্রমিকদের নিয়ে আমরা কাজ করি কিন্তু আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে ব্যাপক ভাবে কাজ করতে পারি না।’ এছাড়া ছাত্রীদের কোন দাবিতেও কর্মসূচি বা কর্মপরিকল্পনা নেই ছাত্রলীগের ছাত্রী নেত্রীদের। ছাত্রলীগের সহ সভাপতি চৈতালি চৈতি বলেন, ‘ছাত্রীদের বিভিন্ন অধিকার বা সমস্যা নিরসনে আপাতত আমাদের কোন কর্মসূচি নেই এবং ছাত্রীদের কোন দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা কাজ করছি না।’
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত সমিতিগুলোর দায়িত্বে আওয়ামী লীগের নেত্রীরাই বেশি। কিন্তু এগুলোর কার্যক্রমও চলে নাম দেখানোর।
নারী ক্ষমতায়ন ও অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক নারী সংগঠনগুলোর দলীয়ভাবে ভূমিকা রাখার বিষয়ে কথা হয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সাথে। তিনি নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘এসব সংগঠনগুলো দলীয়ভাবে কী কর্মসূচি পালন করবে তা তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা ও সমিতির দায়িত্বে আওয়ামী লীগের নেত্রীরা আছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা কাজ করেন।’
মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের সাড়ে তিন হাজার মহিলা সমিতির অধিকাংশের দায়িত্বে আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। তবে সে সব সমিতিগুলোর কার্যক্রমও না থাকার মতো। নারী দিবসে আলোচনা সভা করা ছাড়া তাদের আর কোন কর্মসূচি থাকে না। আওয়ামী লীগের মহিলা অঙ্গসংগঠনগুলো কর্ম-সূচিহীনভাবে ঝিমিয়ে চলার কারণ হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে সংগঠনগুলোর সম্মেলন না হওয়াকেই দায়ী করেন অধিকাংশ নেত্রীরা। এছাড়া ২২ ও ২৩ অক্টোবর আসন্ন আওয়ামী সম্মেলনে কমিটিতে পদ পেতে নেতাদের সাথে যোগাযোগেই সময় যাচ্ছে নেত্রীদের।
২০০৩ সালের ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে আশরাফুন্নেসা মোশাররফকে সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে ইন্দিরা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হলে সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পিনু খান তার স্থলাভিষিক্ত হন। এছাড়া ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ নাজমা আক্তার (সভাপতি) ও অধ্যাপিকা অপু উকিলকে (সাধারণ সম্পাদক) নিয়ে যুব মহিলা লীগের যাত্রা শুরুর পর থেকে আর কোন সম্মেলন হয়নি।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ