
শেখ রিয়াল, ঢাকা: বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। যেখানে দলের প্রধান চেয়ারপারসন একজন নারী, সেখানে কার্য নির্বাহী কমিটির ৫০২ জন এবং চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ৭৩ জনের মধ্যে নারী নেত্রী রয়েছেন মাত্র ৬৭ জন। যা মোট কমিটির সদস্যের শতকরা সাত ভাগ। এর কারণ হিসেবে নারী নেত্রীরা মনে করছেন, পুরুষের তুলনায় নারীরা এখনো রাজনীতিতে আসতে পারেনি। তবে আগের থেকে বিএনপিতে নারী নেত্রীর সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি করেন তারা। সামনে নারীদের অংশ গ্রহণের এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও দাবি করেন নেত্রীরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রয়েছেন ১৯ জন তবে হান্নান শাহ’র মৃত্যুর পর এখনো নতুন কেউ না আসায় ১৮ জন। এদের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া আর কোনো নারী স্থায়ী কমিটিতে নেই। চেয়ারপারসনের ৭৩ জন উপদেষ্টার মধ্যে অধ্যাপিকা তাজমিরী ইসলাম, অধ্যাপিকা ডা. শাহিদা রফিক রোজী কবির, তাহমিনা রুশদি লুনা, আফরোজা খান রীতা এই চার জনই নারী। ৩৫ জন ভাইস-চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র একজন সেলিমা রহমান নারী নেত্রী। এছাড়া বিএনপির কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিবে কোনো নারী নেত্রী নেই। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিলকিছ জাহান শিরিন (বরিশাল), শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর) মাত্র দুজন নারী নেত্রী। সম্পাদক পদে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুর-এ-আরা সাফা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক: রাশেদা বেগম হীরা, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেত্রীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম কেন, এমন প্রশ্ন করলে মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘নারী নেত্রী অনেক কম না তবে আরো হওয়া দরকার ছিল। আমি মনে করি এর সংখ্যা আরো বাড়বে। এখন পর্যন্ত পুরুষের সাথে সমান তালে মেয়েরা রাজনীতিতে আসতে পারেনি এটাই সত্য। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত ভাবেই চান নারীরা রাজনীতিতে এগিয়ে আসুক। সে কারণেই তিনি (খালেদা জিয়া) প্রতিটি ডিসট্রিক থেকে নারীদের খুঁজে খুঁজে মূল্যায়ণ করার চেষ্টা করেন। আমার প্রত্যাশা আগামীতে নারীরা আরো রাজনীতিতে আসবে।
তিনি বলেন, ‘নারী এবং পুরুষ আলাদা করে দেখার কিছু নেই। আমর প্রত্যেকেই মানুষ। নারী পুরুষ সমান। পুরুষ যা কিছু করতে পারবে নারীরাও একইভাবে একই জিনিস করতে পারবে। কোনো ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্যতা, দক্ষতা, সততার পরিচয় দিয়েছে। তবে নারীদের কিছুটা প্রতিকুলতা আছে। এখনো বাংলাদেশে প্রচুর ডমেস্টিক ভায়োলেন হয়। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের দ্বারা নারীরা চরমভাবে নিরযাতিত, নিগ্রিহিত হচ্ছে। এই সব অতিক্রম করেই আবার নারীরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘দিনে দিনে বিএনপির কমিটিতে নারী নেত্রীর সংখ্যা বাড়তেছে। আগে যেমন ছিল তার থেকে বাড়তেছে তবে কমতেছে না। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। আমরা চাই নারীরা আরো রাজনীতিতে আসুক। নারীদের কাজ করার আগ্রহ আছে কিন্তু বর্তমান সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে এতে করে রাজনীতি এখন আর সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। এখন যে অস্ত্রের রাজনীতি বাংলাদেশে চলতেছে তাতে আমরা সবাই কিন্তু বিপদগ্রস্ত। সত্যিকার অর্থে রাজনীতি করতে পারছি না। এখনতো প্রতি পদে পদে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। বিরোধী দলকে তার রাজনীতি করতে দেয়া উচিত কিন্তু মানব বন্ধনের মত সাধারণ প্রোগ্রাম পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। খালেদা জিয়ার নির্যাতনের প্রতিবাদে আমরা একটা মানববন্ধন করেছিলাম সেখানে আমার উপর কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল এটা সবাই দেখেছে। দেশে এখন সম্পর্ণ একটা সন্ত্রাসী অবস্থা বিরাজ করতেছে। রাজনীতিতে সুস্থ্য পরিবেশ ফিরে না আসলে সবাই রাজনীতি করতে পারছে না। শুধু রাজনৈতিক দল নয় দেশের সকল জনগণের জন্যই দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা দরকার।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে যে কমিটিগুলো ছিল সেই কমিটিগুলোর তুলনায় বর্তমানের কমিটিতে অনেক বেশি নারী নেত্রী বেরিয়ে আসছে। নতুন কমিটিতে নতুন প্রজন্মের অনেক প্রাধান্ন রয়েছে। যে পদক্ষেপ শুরু করেছেন খালেদা জিয়া তাতে ভবিষ্যতে নারী নেতৃত্বের পারসেন্টেস আরো বেড়ে যাবে। আমি আশাবাদি যে, যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে এবং আমাদের বর্তমান কমিটিতে যারা আছে সবাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। এভাবে কাজ করলে আমি আশাবাদি সামনে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা নারী একজন পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করবো। তখন আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। একটা পুরুষের সাথে নারীর অনেক ব্যবধান থাকে বিশেষ করে রাজনীতির ক্ষেত্রে। আমরা যখন রাজনীতি ময়দানে যাই, আমাদের অনেক বাঁধা বিপত্তি থাকে। আমাদের নিজেদের ঘরটাকে সামলিয়ে তার পর রাজনীতিতে যেতে হয়। এতো কিছু মেইনটেন করে যে নারী রাজনীতিতে আসে বুঝতে হবে সেই নারীর একজন ছেলের থেকেও বেশি ক্ষমতা।’
উল্লেখ্য, বিএনপির সহ সম্পাদক পদে রয়েছেন- সহঃ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বেবী নাজনিন, সহঃ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহঃ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, সহঃ ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি, সহঃ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সহঃ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু, সহঃ নার্সেস ও স্বাস্থ্য সহকারী বিষয়ক সম্পাদক মিসেস জাহানার বেগম এবং সহঃ মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড আশিফা আশরাফি পাপিয়া।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের (পুরনো) মধ্যে মিসেস রেজিনা ইসলাম (দিনাজপুর), মিসেস বিলকিস ইসলাম (নীলফামারী), মিসেস সাঈদা রহমান জোৎস্না (রংপুর), মিসেস রওশন আরা ফরিদ (গাইবান্ধা), মিসেস লাভলী রহমান (বগুড়া), মিসেস কাজী হেনা (রাজশাহী), এ্যাড. খালেদা পান্না (টাঙ্গাইল), সুলতানা মাহমুদ বাবু (জামালপুর), শাহিদা আখতার রিতা (জামালপুর), মিসেস নূরজাহান ইয়াসমিন (ময়মনসিংহ), মিসেস লায়লা বেগম (কিশোরগঞ্জ), মিসেস রহিমা সিকদার (মুন্সিগঞ্জ), মিসেস লিটা বশির (ঢাকা মহানগর), মিসেস মেহেরুন্নেছা হক (ঢাকা মহানগর), বেগম রাজিয়া আলিম(ঢাকা মহানগর), মিসেস শাহিনা খান(গাজীপুর), মিসেস খালেদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), মিসেস ইয়াসমিন আরা হক(ফরিদপুর), শাহানা আখতার সানু(ফেনী), সাইমুম বেগম(লক্ষীপুর), মিসেস হাসিনা আহমেদ (কক্সবাজার), মিসেস খালেদা রব্বানী (মৌলভীবাজার), সাহানা রহমান রানী (ঝিনাইদহ), মিসেস চমন আরা (যশোর), মিসেস নার্গিস আলী (খুলনা) এবং মিসেস জিবা খান(ঝালকাঠি)।
এছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের (নতুন) মধ্যে নাছিমা আক্তার কল্পনা (ঢাকা) , মিসেস সাবেরা সুলতানা (যশোর), ফিরোজা বুলবুল কলি (যশোর), ফাহিম চৌধুরী (পিতা মৃত. জাহেদ আলী চৌধুরী, শেরপুর), এ্যাড রিনা পারভিন (পঞ্চগড়), আয়েশা সিদ্দিকা মনি (বাগেরহাট), নুর জাহান মাহবুব, পিয়ারা মোস্তফা, ফারিদা ইয়াসমিন (ঢাকা সিটি), এ্যাড সিমকি ইসলাম, এ্যাড আরিফা জেসমিন, এ্যাড মুন্নি (সিলেট), রুখসানা খানম মীতু, সেলিন রউফ চৌধুরী, এলিজা জামান (পিরোজপুর), রিজিয়া ইসলাম (জাসাস), শাহরিন ইসলাম তুহিন (নীলফামারী), নিপুন রায় চৌধুরী, মিসেস রাবেয়া আলী(নেত্রকোনা) এবং মিসেস আওরঙ্গ (শরীয়তপুর)।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ