
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত প্রায় আড়াই জাহার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
সোমবার নাসিরনগর থানায় মামলা করা হয়। ইতোমধ্যে ৫০০ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল দুপুরে সদর থানার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে হবিগঞ্জের মাধবপুরেও দুটি মন্দির ও কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিব মোতায়েন করা হয়।
জানা গেছে, নাসিরনগরের রসরাজ দাস নামে এক যুবক পবিত্র কাবা শরীফের উপর শিব মুর্তি বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশ শনিবার দুপুরে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় নাসিরনগরে দু’টি সংগঠনের উদ্যোগে এ সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। সমাবেশ চলাকালে শত শত লোক দা, লাঠি-সোটা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই যুব বয়সের ও তাদের পরণে প্যান্ট শার্ট ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। কেউ একজন ঘোড়ায় চড়ে এসে হামলা চালান।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া পাড়া, মহাকাল পাড়া, কাশিপাড়া, নমসুদপাড়া, মালিপাড়া, শীলপাড়ায় হামলা হয়েছে। শ্রী শ্রী গৌর মন্দির, শ্রী শ্রী শিব মন্দির, শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, শ্রী শ্রী কালী মন্দির নামে চারটি সার্বজনীন মন্দির ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। ওই সব এলাকার অমূল্য দাস, জয় কুমার সূত্রধর, নিরঞ্জন গোপ, নিধু ঘোষ, বিনোদ ঘোষ, সুশীল সরকার, গোপাল সূত্র, মোহন লাল, হিরালাল দাস, মন্টু ঘোষ, সুব্রত সরকার, প্রদীপ দাস, সজল সরকার, সুজন দেব, কাজল জ্যোতি দত্তসহ অনেকের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লোটপাটের দৃশ্য চোখে পড়ে। তাদের অনেকের বাড়ির ব্যক্তিগত মন্দিরও ভাঙচুরের শিকার হয়।
উপজেলা পূজা উদযাপন সমিতির সভাপতি দত্তপাড়ার কাজল জ্যোতি দত্ত জানান, তার বাড়ি ও মন্দিরেও হামলা হয়। শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ফেরাতে গিয়ে এলাকার কিছু মুসলিম যুবকও আহত হন।
সুব্রত সরকার নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাড়িতে হামলা করতে আসা লোকজন প্রথমেই মারধর শুরু করে। মন্দিরে ভাঙচুরের পাশাপাশি তারা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। প্রদীপ দাস নামে এক ব্যক্তি জানান, তার ভাই মানিক দাসের একমাত্র সম্বল মাছ ধরার জালটিও পুড়িয়ে দেয়া হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাশরুর উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, র্যাব-৯ এর কম্পানি কমান্ডার এএসপি মো. আবু সাঈদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তাঁরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া বলে আশ্বাস দেন।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার বলেন, ’হামলাকারীরা ১০-১৫টি মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শ’র বেশি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমরা এলাকায় শান্তি চাই। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে প্রশাসনসহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করব’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ’শুরু থেকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে’।
প্রতিনিধি, সম্পাদনা: জাহিদ