
ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক নয়টা। রাজশাহী শহরের বাসা থেকে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এ সময় এক ব্যক্তি কাইয়ুমের বাসায় গিয়ে জানান, তাকে বাইরে একজন আর্মি অফিসার ডাকছে। কাইয়ুম সে আর্মি অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি আর কখনো বাসায় ফিরে আসেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দুইদিন পরে রাজশাহীর শহরের কাছে পদ্মার চরে একটি গণকবরে শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমের মরদেহ পাওয়া যায়।
এসব কথা বলেন, নিহত শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমের বড় ছেলে মীর মাসুদ কবির। এ সময় তার বয়স ছিল সাড়ে ছয় বছর।
কবির বলেন, ‘বিজয় দিবসের পরে কেউ একজন আমাদের বাসায় খবর দেন যে আমার বাবার মতো দেখতে একজনের লাশ রাজশাহীর পদ্মার চরে পাওয়া গেছে। সেটা শুনে আমার বড় মামা এবং আমার আম্মার মামা সেখানে যান। আমার বাবার শার্ট এবং হাতের আংটি দেখে ওনারা মৃতদেহ শনাক্ত করেন।’
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তৎকালীন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের হত্যা করে পাকিস্তানী বাহিনী। তাদের সহযোগিতা করেছিল আলবদর বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন সময় এসব হত্যাকাণ্ড হলেও ১৪ ডিসেম্বর একযোগে বহু বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের স্মরণ করতে বুধবার বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
কবির বলেন, ‘আমরা রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের চার নেতার এক নেতা কামরুজ্জামান সাহেবের পাশের বাসায় থাকতাম। পারিবারিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে ওনার সাথে আমার বাবার একটা সখ্যতা ছিল। আমার মামারা বামপন্থী রাজনীতি করতেন। সেখানেও আমার বাবার একটা পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।’
তাছাড়া শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন তরুণ শিক্ষক হিসেবে অনেক শিক্ষার্থীর কাছে তিনি বেশ গ্রহণযোগ্য ছিলেন। এসব কারণে তাকে পাকিস্তানী বাহিনী হত্যা করেছে বলে ধারণা করেন তার পরিবার।
কবির আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এপ্রিল মাসে তৎকালীন শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ুমের রাজশাহীর বাসা অগ্নিসংযোগ করে পাকিস্তানী বাহিনী।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মাথায় যুদ্ধাপরাধের এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত শীর্ষ অভিযুক্তদের বিচার হয়েছে। কবির মনে করেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার হলে ৪৫ বছর আগের ঘটনার ন্যায় বিচার হবে।
সূত্র: বিবিসি, সম্পাদনা: মাহতাব শফি