
ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কুমিল্লার দাউদকান্দির পাকিস্তান ফেরত অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহর (৭২) বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হলো।
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। ওই সময় তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক উপস্থিত ছিলেন।
শহীদুল্লাহর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গোলাপের চর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। তদন্ত করেন জেড এম আলতাফুর রহমান।
ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের তিনটি অভিযোগ আনা হয়। তা হলো—
১৯৭১ সালের ৭ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে আটক করেন। পরে হাবিবুর রহমানকে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেন এবং লাশ গোমতী নদীতে ফেলে দেন।
১৯৭১ সালের ১৬ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৪০-৫০ জন সদস্য নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপের চর গ্রামে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে আটক করে নির্যাতন চালান। পাঁচটি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনকে ছেড়ে দেন এবং একজনকে শহীদুল্লাহ নিজে গুলি করে হত্যা করে লাশ গোমতী নদীতে ফেলে দেন।
১৯৭১ সালের ২১ জুলাই শহীদুল্লাহ হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালান। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কালা মিয়া নামের একজনকে আটক করেন এবং তানজিনা হাসপাতালের পেছনে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে লাশ সেখানকার একটি খালে ফেলে দেন।
শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর।
এর আগে গত বছরের ২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দির আমিরাবাদ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে শহিদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ট্রাইবুনালে হাজির করা হলে তাঁকে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।
প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তার নিজ জেলা কুমিল্লায় আসেন। পরে পশ্চিম পাকিস্তানে আর ফিরে না গিয়ে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কুমিল্লায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।
সম্পাদনা: জাবেদ চৌধুরী