
ময়ূখ ইসলাম, ঢাকা: পাখি, কিরণমালা কিংবা বোঝে না সে বোঝে না-পোশাকের এমন নাম নিশ্চই ভুলেননি ক্রেতারা। ভুলবেন কিভাবে, এই পোশাক না পাওয়ায় হয়েছে আত্মহত্যার ঘটনাও। গেলো কয়েকটি ঈদ বাজারে নারীদের এমন পোশাকের বেশ হাঁকডাক ছিলো। এবারো ব্যতিক্রম নয়।
ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে এবারো রয়েছে ভারতীয় পোশাকের দাপট।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল ঘুরে দেখা যায় নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে ভারতীয় পোশাকের পাল্লা ভারী। যদিও দেশীয় বুটিকের ব্যবসায়ীরাও পশরা সাজিয়ে বসেছেন।
কথা হয় লামিসা ফ্যাশনের বিক্রেতাদের সঙ্গে। দেখা গেলো পুরো শোরুম জুড়ে ভারতীয় পোশাক। বিক্রেতা মোতালেব হোসেন নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে জানান, বাজারে ইন্ডিয়ান কাপড়ের চাহিদা অনেক। বিশেষ করে তরুণীদের মাঝে। তবে সব বয়সীদের পোশাকই নিয়ে এসেছেন তারা।
এই শোরুমে ঈদ উপলক্ষে ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার পোশাক তোলা হয়েছে। সামনে ৭৫ হাজার টাকার পোশাক তোলার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ভারতীয় পোশাকের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবাই এসে ভারতীয় পোশাক খোঁজে। যারা ভাররীয় পোশাক ব্যবহার করেন তারা আর দেশি পোশাক পড়তে চান না। বাজারে এই পোশাকের ক্রেতার অভাব নাই।’
কিছুদিন পরই শোনা যাবে পোশাকের নিত্যনতুন দাম- এমনটাও জানালেন এই ব্যবসায়ী।
বসুন্ধরার দেশীয় পোশাকের শোরুম এস. ফ্যাশন গ্যালারির বিক্রেতা মামুন হোসেন নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে জানান, ঈদ উপলক্ষে তাদের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে তবে এখনো ক্রেতা সমাগম সেভাবে হয়নি। তাদের পোশাকের কদর দেশের সকল বয়সীদের কাছেই রয়েছে।
তিনি জানান, তাদের কাপড়গুলো অধিকাংশই শুতির ফলে ক্রেতারা গরমের দিনে এটাই পছন্দ করবেন। তবে বাজারে ভারতীয় কাপর আমদানির কারণে দেশীয় কাপড়ের চাহিদা কমছে বলে জানান তিনি।
এই শোরুমে ৭০০টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পোশাক পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এমন আরেকজন ব্যবসায়ী, ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘দেশি –বিদেশি পোশাকের ক্রেতা আলাদা। তবে ভারতীয় চাকচিক্কের কারণে ক্রেতারা ওই দিকে ঝুঁকছেন।’
খবরে প্রকাশ, ভারতীয় সিরিয়াল ‘কিরণমালা’ নামানুসারে তৈরি ‘কিরণমালা’ জামা না পেয়ে গত ঈদে আত্মহত্যা করেছেন তিন তরুণী। তাদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুরের কালকিনির মিনারা (২৭), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের তাছলিমা আক্তার (১২) ও বগুড়ার শেরপুরে সাবিনা খাতুন (১৪)।
এর আগে ভারতীয় সিরিয়াল ‘বোঝে না সে বোঝে না’ নাটকের পাখি চরিত্রের ‘পাখি জামা’ না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন অন্তত ১০ জন। তারা এর মধ্যে নওগাঁর মিম আক্তার (১৪), গাইবান্ধার নূর জাহান (১০), দিনাজপুরের জেসমিন আরা (১৭), হবিগঞ্জের পাখি (১৩), চাঁপাইনবাবগঞ্জের হালিমা (১২), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফুলমালা (১৫), চুয়াডাঙ্গার শিলা খাতুন (১৫) এবং রাজধানীর গুলশানের জেরিন ইসলাম বৃষ্টি (১৭) এর নাম জানা গেছে।
এছাড়া স্ত্রীকে পাখি জামা দিতে না পেরে আত্মহত্যা করেন শেরপুরে শাহিন নামের এক যুবক। অন্যদিকে মেয়ের জামা সংগ্রহ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন কুষ্টিয়ায় আলেয়া বেগম নামের এক গৃহবধূ। আর স্বামী পাখি জামা কিনে না দেয়ায় তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান খুলনার শারমিন আক্তার।
তারও আগে শিশুদের জন্য ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত কার্টুন ‘ডোরেমন’ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা নিয়ে আলোচনা হয় জাতীয় সংসদেও।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এমআই/এমএইচ