
বরিশাল: আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের শব্দ মোবাইলে পরিবারের সদস্যদের শুনিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবির অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত ৩১ জুলাই কোতোয়ালী থানায় এজাহারভুক্ত মামলার আসামি শাহাদৎ শৈশবকে (২১) বাসা থেকে গ্রেফতা করে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের শব্দ মোবাইলে পরিবারের সদস্যদের শুনিয়ে মোটা অংকের ঘুষ দাবির অভিযোগে মামলার তন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুল মান্নানকে ক্লোজ করা হয়।
নির্যাতিত শৈশবে’র বোন মোসাম্মাৎ সুইটি উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আঃ রউফ’র কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর রোববার রাতে এসআই আব্দুল মান্নানকে কোতোয়ালী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আঃ রউফ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এস আই মান্নানকে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করা হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই আব্দুল মান্নানকে এব্যাপারে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় ৩১ জুলাই রোববার দুপুর ১২টার দিকে এস আই আব্দুল মান্নান সহ ৫/৬ জন পুলিশ নগরীর মুসলিম গোরস্তান রোডের বাসা থেকে শৈশবকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে শৈশবের বোন মোসাম্মদ সুইটি তার মা ও খালাকে সাথে নিয়ে থানায় আসলে দেখতে পায় দোতালায় এস আই মান্নান তার রুমে বসে শৈশবকে অমানবিক নির্যাতন করছে।
শৈশবের উপর এ নির্যাতন দেখে শৈশবের মা অজ্ঞান হয়ে গেলে আর বোন কান্নাকাটি শুরু করলে ত্রসআই মান্নান তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে থানা থেকে বের করে দেন।
থানা থেকে কিছুদূর যাত্তয়ার পর তাদের মোবাইলে ০১৬২৩৩০২০৬৬ নম্বর হতে দেয়া কল রিসিভ করলে তারা শৈশবের চিৎকার এবং তার প্রাণ বাঁচানোর আকুতি শুনে আবারো থানায় ছুটে আসলে এসআই আব্দুল মান্নান বলে আপনার ভাইকে এখনও বেশি মারি নাই, রাতে আরো মারবো, পুকুরের পচা পানি খাওয়াবো।
একথা শুনে তারা থানা থেকে বের হয়ে কিছুটা পথ আসতে না আসতে একই নম্বর দিয়ে কল দেয়া ফোন রিসিভ আবারো শৈশবের চিৎকার শুনিয়ে নির্যাতন বন্ধের জন্য মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করে ফোন কেটে দেয়।
এ অভিযোগে আরো বলা হয়, গত ২৯ জুলাই রাত আনুমানিক পোনে ২টার দিকে এস আই মান্নান দুই জন লোক নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে শৈশবকে গ্রেফতার করতে এসেছেন বলে জানালে পরিবারের লোকজন কারণ ও ওয়ারেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে এসআই মান্নান অকথ্য ভাষায়নোংরা কথা বলে।
বাসা তল্লাশি চালিয়ে শৈশবকে না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় এসআই মান্নান তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ০১৭২৪৯৯৬৩৯৮ দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে শৈশবের বিয়য়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলে।
তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাদের সাথে থাকা একজন সুইটিকে বলে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে মামলা থেকে শৈশবের নাম কাটানো যাবে। তাদের প্রস্তাব সুইটি প্রত্যাখান করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়।
এদিকে শৈশবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে নগরীর ঝাউতলা ১নং গলির বসিন্দা মজিবুর রহমান বাচ্চুর নেশাগ্রস্ত ছেলে মাদকদ্রব্য আইনের বিচারাধীন মামলার আসামি হৃদয় গত ১৯ জুলাই রাতে বাসা থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নগরীর মহিলা কলেজ গলি আগরপুর রোডে আসে।
তখন শৈশব তার পূর্ব পরিচিত হৃদয়কে কথা আছে বলে মহিলা কলেজের সামনে নিয়ে গেলে সেখানে কয়েকজন সন্ত্রাসী পিস্তল দিয়ে আঘাত করে তাকে অচেতন করে অন্য একটি বাসায় নিয়ে আটকে ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
রাত অনুমান ১২টার দিকে সুযোগ বুঝে হৃদয় ঘর থেকে বের হয়ে দৌড় দিলে সন্ত্রসীরাও পিছু নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে। এসময় সন্ত্রসীদের ভয়ে হৃদয়ের ডাক চিৎকারে কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।
ছেলে বাসায় ফিরতে দেরি দেখে হৃদয়ের চাচা বজলুর রহমানকে সাথে নিয়ে বোন আগরপুর রোডে আসলে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্বার করে শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হৃদয়ের জ্ঞান ফিরে আসার পর সব ঘটনা শুনে ২৬ জুলাই হৃদয়ের মা সেলিনা পারভীন বাদী হয়ে শৈশব সহ ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৫৬।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/প্রতিনিধি/জাই