
ঢাকা: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থী না হলে তাকে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বা মন্তব্য করে বিব্রত করা হয়। এমন তথ্য উঠে এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। রোববার সংস্থাটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিপু রায় ও মো. রেজাউল করিম।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থী বা প্রার্থীদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সুবিধা অনুযায়ী প্রার্থীতার যোগ্যতা পরিবর্তন এবং বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর জন্য যে কোনো শর্ত শিথিলযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী বা অপছন্দের প্রার্থীদেরকে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দেখানোর জন্য তথ্য গোপন করা, নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বেই কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীদেরকে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে তা নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ এবং পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থী না হলে তাকে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বা মন্তব্য করে বিব্রত করার মতো দৃষ্টান্ত রয়েছে।
এছাড়াও বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত দ্বিগুণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে তিনগুণ পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ – কে গুরুত্ব না দেয়ার তথ্য উঠে এসেছে ওই গবেষণায়।
গবেষণায় উত্থাপিত প্রধান সুপারিশ
পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা বা নির্দেশিকা প্রণয়ন, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে শিক্ষক সমিতির প্রভাবমুক্ত রাখা, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন, শিক্ষক সমিতির কার্যক্রম সীমিতকরণ এবং ফলাফল ইঞ্জিনিয়ারিং বন্ধকরণ। এছাড়া, শিক্ষকদের কর্মভার বিবেচনা করে শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা যাচাই ও উপস্থাপন, প্রভাষক পদে আবেদন করার যোগ্যতা বা নিয়ম পূর্ব থেকে সুনির্দিষ্ট করা, নিয়োগ কমিটি গঠনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, আবেদনের জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রদান, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীতা মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণ, নিয়োগ পরীক্ষার নম্বর প্রদানের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকা, ‘নোট অব ডিসেন্ট’কে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া, নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, প্রার্থীদের আবেদন সাপেক্ষে নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জানার ব্যবস্থা এবং নিয়োগ-বিধি লঙ্ঘনের কার্যকর জবাবদিহিতা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতার আলোকে টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনের ফলকে ‘বাস্তব’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘একজন শিক্ষকও যদি নিয়ম বর্হিভূতভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাহলে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ বছরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান।’
প্রতিবেদনে উল্লিখিত কিছু ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার উচ্চশিক্ষা কমিশন ও এক্রেডিয়েশন কাউন্সিল গঠনের সময় প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ বিবেচনা করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন, ভৌগলিক অবস্থান ও প্রতিষ্ঠাকাল বিবেচনা করে সাধারণ আটটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দু’টি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি দু’টি এবং একটি কৃষিসহ মোট ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এ গবেষণার জন্য নির্বাচন করা হয়। তবে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত তথ্য, পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয় বলেও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ড এর সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
গ্রন্থনা: ময়ূখ ইসলাম, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ