
ফারহানা করিম চৌধুরী, ডেস্ক: অক্টোবর মাসের শেষে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের গেটিসবার্গে বক্তৃতা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনে কি করবেন সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। এই পরিকল্পনার রূপরেখায় তিনটি বিষয়কে প্রধান্য দিয়েছেন তিনি।
এগুলো হলো, কংগ্রেস সদস্যদের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে ওয়াশিংটনের জঞ্জাল সাফ করা, মার্কিন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা।
এছাড়া ওবামাকেয়ার বাতিল করা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করা, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, সামরিক ঘাঁটি পুনর্নির্মাণ করার অঙ্গীকার করেন তিনি।
বুধবার সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পের কিছু কিছু পরিকল্পনার বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখাননি। বিশেষ করে কংগ্রেস সদস্যদের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে তিনি জানান, এটা সিনেটের এজেন্ডার মধ্যে নেই। এছাড়া ট্রাম্পের অবকাঠামো পরিকল্পনার বিষয়টি শীর্ষ অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই বলে, এতে স্রেফ ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছেন তিনি। অবশ্য তিনি ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাহারের বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একমত। পাশাপাশি কর নীতির ব্যাপক সংস্কার এবং সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন।অবশ্য অভিবাসন বিষয়ে সিনেটে অধিকতর আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
ম্যাককনেল বলেন, ‘আমরা তার (ট্রাম্প) সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। আমি মনে করি, তার পরিকল্পিত বেশিরভাগ বিষয় নিয়ে কাজ করতে আমরা প্রবলভাবে আগ্রহী।’
‘আমেরিকান ভোটারদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুক্তি’ নামে অভিহিত ট্রাম্পের ১০০ দিনের পরিকল্পনাগুলো হলো:
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন দুর্নীতি এবং অশুভ আঁতাত দূর করার জন্য তার প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ছয়টি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করবে।
প্রথমত, কংগ্রেস সদস্যদের মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেয়ার জন্য একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রস্তাব করা হবে।
হোয়াইট হাউজ এবং কংগ্রেসের কর্মকর্তাদের সরকারি চাকরি ছেড়ে দেয়ার পর তদবিরকারী হওয়া থেকে বিরত থাকতে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
হোয়াইট হাউজের যেসব কর্মকর্তা বিদেশি সরকারের পক্ষে হয়ে তদবির করবেন, তাদের উপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
মার্কিন নির্বাচনে যেসব বিদেশি লবিস্ট অর্থ সংগ্রহ করবেন তাদের পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
প্রত্যেকটি নতুন ফেডারেল নিয়মকানুনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুটি নির্মূল করা হবে।
এছাড়া মার্কিন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যা নাফটা নামে পরিচিত, সেটির পুনর্মূল্যায়ন করবেন কিংবা বাতিল করবেন। এছাড়া ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি বাতিল করার ঘোষণাও দেন তিনি।
চীনকে মুদ্রা কারসাজির জন্য চিহ্নিত করা হবে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
যেসব বিদেশি ব্যবসা অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করার কারণে মার্কিন শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিবেন। এবং এসব অপব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য মার্কিন এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিবেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং বিল ক্লিনটন যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন তা প্রত্যাহার করে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামো প্রকল্প যেমন, কিস্টোন পাইপলাইন চালু করার অনুমতি দিবেন।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচিতে অর্থ দেয়া বন্ধ করবেন। পরিবর্তে এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের পানি এবং পরিবেশগত অবকাঠামো ঠিক করতে ব্যবহার করবেন।
নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সাংবিধানিকভাবে আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করতে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার নির্বাহী ক্ষমতার বলে যেসব অসাংবিধানিক আদেশ দিয়েছেন তা প্রথমেই বাতিল করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্কালিয়ার মৃত্যুর পরে যে শূণ্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করবেন। তিনি এমন একজন বিচারক নিয়োগ দিবেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা করবেন এবং সমুন্নত রাখবেন।
২০ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী এবং অপরাধীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করবেন। এবং যেসব দেশ তাদের ফেরত নেবেনা তাদের ভিসামুক্ত চলাচল বাতিল করবেন।সন্ত্রাস প্রবণ অঞ্চলগুলো থেকে অভিবাসন স্থগিত করা হবে।
করের বোঝা থেকে রেহাই দেয়ার লক্ষ্যে মধ্যবিত্তদের জন্য কর নীতির সংস্কার করবেন। অন্তত ২৫ মিলিয়ন নতুন চাকরি সৃষ্টি করবেন।
বিদেশে উৎপাদিত মার্কিন কোম্পানির পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করা হবে, যাতে মার্কিন কোম্পানিগুলো অন্য দেশে তাদের কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত না হয়।এর ফলে মার্কিন শ্রমিকরা উপকৃত হবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, আমেরিকাকে আবারো মহান করে গড়ে তোলার জন্য এই ১০০ দিনের পরিকল্পনা পেশ করছেন তিনি। এটা মার্কিন ভোটার এবং তার নিজের মধ্যে একটি চুক্তি। সততা, জবাবদিহিতার মাধ্যমে এবং ওয়াশিংটনের পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম শুরু হবে।সূত্র: এনপিআর
সম্পাদনা: জাহিদ