
ঢাবি: ঢাক-ঢোল, একতারা-দোতারা ও বাঁশির সমন্বিত সুরে মুখর হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার বকুলতলা। সকালে হালকা শীতের আমেজে ঝলমলে রোদ ছড়িয়ে পড়তে না-পড়তেই ভিড় করেছেন নানা বয়সের উৎসবপ্রিয় মানুষ। তাদের উচ্ছ্বল পদচারণায় প্রাণের উচ্ছ্বাস আর লোকজ আমেজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর ছিল নবান্ন উৎসব।
নগরবাসীর উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু চারুকলার বকুলতলা প্রাঙ্গণ। মঙ্গলবার এই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদ’। চারুকলার বকুলতলা ও ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে নবান্ন উত্সব উদযাপনে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সুরের সঙ্গে দিনভর ছিল নানা আয়োজন। বকুলতলায় ভোরে বংশীবাদক এসএম মোর্তজা কবির মুরাদের রাখালিয়া বাঁশির সুর-মূর্ছনায় শুরু হয় নবান্ন উৎসববের আনুষ্ঠানিকতা। বাঁশিতে ভৈরবী রাগ পরিবেশন করেন তিনি। ছিল নবান্নকথন। নবান্নকথনে স্মৃতি থেকে উঠে আসে আবহমান বাংলার গ্রামীণ চিত্র। কুয়াশাভেজা সকালে মায়েরা আয়োজন করেন শীতের নানা খাবার। খড়কুটোর উনুনের ধারে সন্তানদের আনাগোনা। হেমন্ত আর নবান্নের এই আবহমান চিত্র যেন উদ্ভাসিত হয়ে উঠল নাচে-গানে-কাব্যে আর কথামালায়।
‘এসো মিলি সবে নবান্নের উত্সবে’ স্লোগান নিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দুই পর্বের উৎসবে নবান্নকথনে অংশ নেন লায়লা হাসান, শুভ রহমান, কাজী মদিনা, হাসিনা মমতাজ এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএম শামীম। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্ষদের আহ্বায়ক শাহরিয়ার সালাম।
উৎসব সাজানো হয় নবান্ন বিষয়ক গান ও নাচ দিয়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজনে ছিল মাটির গান, কৃষকের গান, ফসল তোলার আনন্দের গান। ফরিদা পরভীন পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান। এরপর সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘আবার জমবে হাটখোলা বটতলা নব্বান্ন উৎসব’, উদীচী ‘নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে’, বহ্নিশিখা ‘আয়রে আয়রে ছুটে আয় সবে আয়রে ধান কাটি ধান কাটি’, স্বভূমি ‘সুন্দর সুবর্ণ লাবণ্য’। ‘চাঁদ উঠেছে ওই, ফুল ফুটেছে ওই, নাচো দেখি সোনার মেয়ে চুল খুলে’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে এমআর ওয়াসেকের পরিচালনায় নন্দন কলাকেন্দ্র। ‘ঢোল বাজে ঢোল বাজেরে’ গানের সঙ্গে অনিক বসুর পরিচালনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। সাইরেনের পরিচালনায় গারোর ওয়ানগালা নৃত্য পরিবেশন করে গারো সাংস্কৃতিব সংগঠন আচিক। শস্য তোলা ও বণ্টনের রকমফের নিয়ে বিভিন্নধর্মী নৃত্য পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন কাদা-মাটি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মানজার চৌধুরী সুইট।
প্রথম পর্বের পরিবেশন শেষে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে চারুকলার বকুলতলা থেকে বের হয় নবান্ন শোভাযাত্রা। টিএসসি চত্বর ঘুরে পুনরায় চারুকলার বকুলতলায় এসে শেষ হয়। বিকাল তিনটা থেকে আটটা পর্যন্ত একযোগে চারুকলার বকুলতলা ও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
সম্পাদনা :শিপন আলী