Wednesday, September 27th, 2023
বঙ্গবন্ধু কেন টার্গেট ?
December 13th, 2020 at 6:45 pm
বঙ্গবন্ধু কেন টার্গেট ?

তাহমীম সৈয়দ হক:

উপরের শিরোনামটা অনেকের মনে হতে পারে এই প্রশ্নটা করছি কেনো ? ওরা তো ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে , বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেনি । যারা এই কথা গুলো বলছেন চাপে পরে করছেন । আসলে টার্গেট তাদের বঙ্গবন্ধু । এটা নিছক সরলীকরণ নয় এর পিছনে শানে নুযূল আছে । এদের জিঘাংসার একটিই কারণ তাদের বাপ দাদার ” সাধের পাকিস্তান ” ভাঙ্গা । শুধু ওই একটি মাত্র কারণই বঙ্গবন্ধুর অপরাধ । আর বাদ বাকি নিছক ছলনা । মিথ্যে প্রেমের অভিনয় ।যারা ফেসবুকে হু হা করছেন তাদের তো আমরা চিনি রে ভাই । তাঁর বাপ অস্ত্র হাতে মানুষ মারছে । তাঁর ভাই রাজাকারির খাতায় নাম লিখায়ছে । আমাদের তাদের চিনাতে হবে না ।

তাঁরা আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও । একটা কথা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি পাকিস্তান। তাদের পাঁক পবিত্র জমিন যারা আজ কথা বলছেন তাদের বাপদাদার খৎনার উপর দাড়িয়ে বাঙালী রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে । বাংলাদেশ । বাংলা ভাষাটাই হিন্দুদের ভাষা ছিল তাদের ভাষায় । সেই বাংলা নামেই দেশ । সেই ৫২ থেকেই বলা হয়েছে পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য এটা হিন্দুস্থানি এজেন্ট দের ষড়যন্ত্র । ৫৪ এর নির্বাচনে বলা হয়েছে নৌকায় ভোট দিলে বউ তালাক হয়ে যাবে । একাত্তরের যুদ্ধকে বদরের যুদ্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে । মুসলমানদের দেশ ভাঙ্গার জন্য পাকিস্তানি আর্মিকে / তাদের সহযোগী রাজাকার আলবদরদের মোটিভেট করা হয়েছে এটি “ধর্মযুদ্ধ” ।

বিধর্মী নারী শিশু এবং আওয়ামী সমর্থক সব গনিমতের মাল । ধর্ষণকে জায়েজ করা হয়েছে ধর্মযুদ্ধ বলে । আইসিস যা করেছে ইরাকে , সিরিয়ায় । বাঙালী নারীদের পাকিস্তানি সামরিক অফিসাররা গর্ভবতী করেছে নিশঙ্কচিত্তে এজন্য যে পাকি বীজ বপন করে যাবে এই বাংলায় । এটা তাহারা কিভাবে অস্বীকার করিবে ?? একটা হিসাব আপনারা কইরেন ভাই । পাকিস্তান ভেঙ্গেছে শুধুমাত্র এই অপরাধেই বঙ্গবন্ধু অপরাধি । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হলেও এটা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা । সাক্ষ্য সাবুদ সব ছিল । এজন্য এই মামলায় বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় হয় । সার্জেন্ট জহুরুল হক কে বেয়নেট দিয়ে মারা হয় । বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাঁচাবার জন্যই উনসত্তরের গন অভ্যুত্থান হয়েছিলো অনেকেই এটা ভুলে গেছে । ছয় দফা ভুলে গেছে অনেকে । সব পাকিস্তান ভাঙ্গার ম্যানিফ্যাস্টো ।

ওই একটাই অপরাধ পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য যে নেতা সব করেছেন । একটি অনিচ্ছুক নেংটি পড়া নেটিভদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন । আমরা ভুলে গেলেও তাঁরা ভুলেনি । এজন্যই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের এতো রাগ । একাত্তর সালের কথা চিন্তা করুন । পাকিস্তানি হানাদাররা যেখানেই গেছে সেখানেই হিন্দু বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে । জেলে পাড়া, মলো পাড়া কিছুই বাদ যায়নি । সেখানে গিয়ে বলেছে , ” ইদার মে কোন হিন্দু হে , ইদার মে কোন আওয়ামী লীগ হে “। আর এর জন্য হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস পড়ার দরকার নাই । আপনাদের মুরুব্বি যারা বেঁচে আছেন তাদের জিগ্যেস করুন । লুঙ্গী খুলে খৎনা দেখাতে হয়েছে যা এটা আর এখন অনেকেই বলেন না ।

এই মুসলমান হাজাম দের কাছ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে যার প্রধান উদ্গাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু । এজন্যই এতো জিঘাংসা বঙ্গবন্ধুর প্রতি । ভাস্কর্য একটা উসিলা । বিজয়ের আনন্দ ক্ষণিকের , পরাজয়ের বেদনা চিরস্থায়ী । এর প্রতিক্রিয়া এখন আমরা দেখছি । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সৌদি আরব স্বীকৃতি দেয়নি । মিশরের নাসেরের বদান্যতায় মিশরের পাসপোর্ট দিয় বাংলাদেশের মানুষকে হজ্ব করতে হয়েছে । স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় ।

তারপর দেশের উল্টো দিকে যাত্রা। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে বিসর্জন দেওয়া সামরিক ফরমানের মধ্য দিয়ে । বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করা হয় । ইতিহাসে , ভূগোলে কোথাও ছিলেন না বঙ্গবন্ধু । ছবি তো অনেক দূরে । বঙ্গবন্ধুর সাথে নিষিদ্ধ ছিল রবীন্দ্রনাথের দরবেশ মার্কা ছবি । মনে আছে ৮৭ এর ডাকসু নির্বাচনের পর সুলতান মনসুর বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি টাঙ্গিয়েছিলেন । তখন দেখেছিলাম রাজনীতির কদর্য রূপ । এলারজি । শুধু মাত্র মোস্তফা মহসিন মন্টুকে বলতে শুনেছিলাম দরকার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দেয়াল খসে পড়বে বঙ্গবন্ধুর ছবি যে দেয়ালে শুধু তা থাকবে । সুতরাং লড়াইটা ভাস্কর্যের নয় একাত্তরের পরাজয়ের ।

মূর্তি ভাস্কর্য এখন আসছে কেন ? সাভারের স্মৃতি সৌধ , শহীদ মিনার , অপরাজেয় বাংলা , স্বোপার্জিত স্বাধীনতা এগুলো কি ?? আজ ভাস্কর্য ভাঙ্গছে । আগামীকাল সব ভাঙ্গবে । বাংলাদেশ সিরিয়ার প্রলমেরো হবে । রাকা হবে । শিখা অনির্বাণ নির্বাপিত হবে । বাংলাদেশ এর নাম হালাল উপায়ে রাখা হবে বাংলা স্থান বলে । বঙ্গোপসাগরের নাম হালাল হবে খৎনা দিয়ে । ভাস্কর্য ভাঙ্গা একটা টেস্ট কেস । বঙ্গবন্ধু এখনো অপরাধী রয়ে গেছেন পবিত্র পাকিস্থান ভাঙ্গার জন্য । তবে তাঁরা ভুলে গেছে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে এখনো বেঁচে আছেন ।

বাবা হারা মা হারা র বেদনা নিয়ে যখন তাঁকে প্রথম দেশে আসেন তখন তাঁকে শুনতে হয়েছে । হাসিনা গো হাসিনা তোমার কথায় নাচি না। .পদ্মা সেতুর মতো বাংলাদেশের উন্নয়ন স্প্যান দৃশ্যমান হচ্ছে । আর এখানেই তাদের আশার গুড়ে বালি । আমাদের বিজয় দিবস সমাসন্ন ।

তাহমীম সৈয়দ হক ; লেখক , আইনজীবী , উপস্থাপক এবং নব্বই দশকের সাবেক ছাত্র নেতা ।


সর্বশেষ

আরও খবর

বিএনপির মিছিলে থাকা তরুণ ভোটার কতটুকু জানে তারেকনামা

বিএনপির মিছিলে থাকা তরুণ ভোটার কতটুকু জানে তারেকনামা


বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অসাংবিধানিক ও বেআইনি : পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে

বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অসাংবিধানিক ও বেআইনি : পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে


নড়াই নদীর কষ্ট

নড়াই নদীর কষ্ট


মধ্যপ্রাচ্যে গাঁজা চাষ: সমস্যা না সম্ভাবনা ?

মধ্যপ্রাচ্যে গাঁজা চাষ: সমস্যা না সম্ভাবনা ?


কোরআন ও ইসলামে পীর কি?

কোরআন ও ইসলামে পীর কি?


এতকিছুর পরও বঙ্গবন্ধু তাঁকে ‘আমার সিরাজ’ বলেই সম্বোধন করেছেন

এতকিছুর পরও বঙ্গবন্ধু তাঁকে ‘আমার সিরাজ’ বলেই সম্বোধন করেছেন


প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের সাফল্য:  আব্দুল মোমেন

প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের সাফল্য: আব্দুল মোমেন


আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস

আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস


বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?

বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?


স্বাধীন বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠায় পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার অবদান

স্বাধীন বাংলাদেশে পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠায় পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার অবদান