
তাহমীম সৈয়দ হক:
উপরের শিরোনামটা অনেকের মনে হতে পারে এই প্রশ্নটা করছি কেনো ? ওরা তো ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে , বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেনি । যারা এই কথা গুলো বলছেন চাপে পরে করছেন । আসলে টার্গেট তাদের বঙ্গবন্ধু । এটা নিছক সরলীকরণ নয় এর পিছনে শানে নুযূল আছে । এদের জিঘাংসার একটিই কারণ তাদের বাপ দাদার ” সাধের পাকিস্তান ” ভাঙ্গা । শুধু ওই একটি মাত্র কারণই বঙ্গবন্ধুর অপরাধ । আর বাদ বাকি নিছক ছলনা । মিথ্যে প্রেমের অভিনয় ।যারা ফেসবুকে হু হা করছেন তাদের তো আমরা চিনি রে ভাই । তাঁর বাপ অস্ত্র হাতে মানুষ মারছে । তাঁর ভাই রাজাকারির খাতায় নাম লিখায়ছে । আমাদের তাদের চিনাতে হবে না ।
তাঁরা আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও । একটা কথা আমরা অনেকেই ভুলে গেছি পাকিস্তান। তাদের পাঁক পবিত্র জমিন যারা আজ কথা বলছেন তাদের বাপদাদার খৎনার উপর দাড়িয়ে বাঙালী রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে । বাংলাদেশ । বাংলা ভাষাটাই হিন্দুদের ভাষা ছিল তাদের ভাষায় । সেই বাংলা নামেই দেশ । সেই ৫২ থেকেই বলা হয়েছে পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য এটা হিন্দুস্থানি এজেন্ট দের ষড়যন্ত্র । ৫৪ এর নির্বাচনে বলা হয়েছে নৌকায় ভোট দিলে বউ তালাক হয়ে যাবে । একাত্তরের যুদ্ধকে বদরের যুদ্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে । মুসলমানদের দেশ ভাঙ্গার জন্য পাকিস্তানি আর্মিকে / তাদের সহযোগী রাজাকার আলবদরদের মোটিভেট করা হয়েছে এটি “ধর্মযুদ্ধ” ।
বিধর্মী নারী শিশু এবং আওয়ামী সমর্থক সব গনিমতের মাল । ধর্ষণকে জায়েজ করা হয়েছে ধর্মযুদ্ধ বলে । আইসিস যা করেছে ইরাকে , সিরিয়ায় । বাঙালী নারীদের পাকিস্তানি সামরিক অফিসাররা গর্ভবতী করেছে নিশঙ্কচিত্তে এজন্য যে পাকি বীজ বপন করে যাবে এই বাংলায় । এটা তাহারা কিভাবে অস্বীকার করিবে ?? একটা হিসাব আপনারা কইরেন ভাই । পাকিস্তান ভেঙ্গেছে শুধুমাত্র এই অপরাধেই বঙ্গবন্ধু অপরাধি । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হলেও এটা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা । সাক্ষ্য সাবুদ সব ছিল । এজন্য এই মামলায় বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় হয় । সার্জেন্ট জহুরুল হক কে বেয়নেট দিয়ে মারা হয় । বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাঁচাবার জন্যই উনসত্তরের গন অভ্যুত্থান হয়েছিলো অনেকেই এটা ভুলে গেছে । ছয় দফা ভুলে গেছে অনেকে । সব পাকিস্তান ভাঙ্গার ম্যানিফ্যাস্টো ।
ওই একটাই অপরাধ পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য যে নেতা সব করেছেন । একটি অনিচ্ছুক নেংটি পড়া নেটিভদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন । আমরা ভুলে গেলেও তাঁরা ভুলেনি । এজন্যই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের এতো রাগ । একাত্তর সালের কথা চিন্তা করুন । পাকিস্তানি হানাদাররা যেখানেই গেছে সেখানেই হিন্দু বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে । জেলে পাড়া, মলো পাড়া কিছুই বাদ যায়নি । সেখানে গিয়ে বলেছে , ” ইদার মে কোন হিন্দু হে , ইদার মে কোন আওয়ামী লীগ হে “। আর এর জন্য হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস পড়ার দরকার নাই । আপনাদের মুরুব্বি যারা বেঁচে আছেন তাদের জিগ্যেস করুন । লুঙ্গী খুলে খৎনা দেখাতে হয়েছে যা এটা আর এখন অনেকেই বলেন না ।
এই মুসলমান হাজাম দের কাছ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে যার প্রধান উদ্গাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু । এজন্যই এতো জিঘাংসা বঙ্গবন্ধুর প্রতি । ভাস্কর্য একটা উসিলা । বিজয়ের আনন্দ ক্ষণিকের , পরাজয়ের বেদনা চিরস্থায়ী । এর প্রতিক্রিয়া এখন আমরা দেখছি । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সৌদি আরব স্বীকৃতি দেয়নি । মিশরের নাসেরের বদান্যতায় মিশরের পাসপোর্ট দিয় বাংলাদেশের মানুষকে হজ্ব করতে হয়েছে । স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় ।
তারপর দেশের উল্টো দিকে যাত্রা। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে বিসর্জন দেওয়া সামরিক ফরমানের মধ্য দিয়ে । বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করা হয় । ইতিহাসে , ভূগোলে কোথাও ছিলেন না বঙ্গবন্ধু । ছবি তো অনেক দূরে । বঙ্গবন্ধুর সাথে নিষিদ্ধ ছিল রবীন্দ্রনাথের দরবেশ মার্কা ছবি । মনে আছে ৮৭ এর ডাকসু নির্বাচনের পর সুলতান মনসুর বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি টাঙ্গিয়েছিলেন । তখন দেখেছিলাম রাজনীতির কদর্য রূপ । এলারজি । শুধু মাত্র মোস্তফা মহসিন মন্টুকে বলতে শুনেছিলাম দরকার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দেয়াল খসে পড়বে বঙ্গবন্ধুর ছবি যে দেয়ালে শুধু তা থাকবে । সুতরাং লড়াইটা ভাস্কর্যের নয় একাত্তরের পরাজয়ের ।
মূর্তি ভাস্কর্য এখন আসছে কেন ? সাভারের স্মৃতি সৌধ , শহীদ মিনার , অপরাজেয় বাংলা , স্বোপার্জিত স্বাধীনতা এগুলো কি ?? আজ ভাস্কর্য ভাঙ্গছে । আগামীকাল সব ভাঙ্গবে । বাংলাদেশ সিরিয়ার প্রলমেরো হবে । রাকা হবে । শিখা অনির্বাণ নির্বাপিত হবে । বাংলাদেশ এর নাম হালাল উপায়ে রাখা হবে বাংলা স্থান বলে । বঙ্গোপসাগরের নাম হালাল হবে খৎনা দিয়ে । ভাস্কর্য ভাঙ্গা একটা টেস্ট কেস । বঙ্গবন্ধু এখনো অপরাধী রয়ে গেছেন পবিত্র পাকিস্থান ভাঙ্গার জন্য । তবে তাঁরা ভুলে গেছে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে এখনো বেঁচে আছেন ।
বাবা হারা মা হারা র বেদনা নিয়ে যখন তাঁকে প্রথম দেশে আসেন তখন তাঁকে শুনতে হয়েছে । হাসিনা গো হাসিনা তোমার কথায় নাচি না। .পদ্মা সেতুর মতো বাংলাদেশের উন্নয়ন স্প্যান দৃশ্যমান হচ্ছে । আর এখানেই তাদের আশার গুড়ে বালি । আমাদের বিজয় দিবস সমাসন্ন ।
