
ঢাকা: বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়সহ সাতটি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শরীফুল ইসলাম শরীফ ওরফে হাদি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করলেও নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন তার নাম মুকুল রানা। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে এসে মুকুলের দুলাভাই হেদায়েতুল ইসলাম ও চাচাত ভাই রহমত আলী তার লাশ শনাক্ত করে।
হেদায়েতুল ইসলাম নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, পত্রিকায় মুকুলের ছবি দেখেই সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি। ওর নাম মুকুল রানা (২৫)। পিতার নাম আবুল কালাম আজাদ। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার বালুইগাছা। তারা দুই ভাই এক বোন। মুকুলের বাবার সাতক্ষীরায় ছোট একটি চিংড়ির ঘের রয়েছে।
মুকুল কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। মুকুল সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা অস্বচ্ছল থাকায় এক বছর আগে চাকরির খোঁজে সে ঢাকায় আসে।
হেদায়েতুল আরো বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সে গ্রামে গিয়েছিল। তখন মহুয়া সুলতানা নামের এক মেয়ের সাথে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে আবার ঢাকায় ফিরে আসে। মুকুল কি চাকরি করতো, তার অফিস কোথায় এগুলো কিছুই সে তার পরিবারকে জানায়নি। আমরা শুধু এতটুকু জানতাম যে সে ঢাকার উত্তরাতে থাকে।
শনিবার রাত পৌনে ৩টায় খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া এলাকার বাশঁপট্টি নামক জায়গায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই যুবক নিহত হন। পুলিশের দাবি তার নাম শরীফুল ইসলাম শরীফ ওরফে হাদি। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক ও আইটি শাখার শীর্ষ পর্যায়ের একজন প্রশিক্ষক ছিল।
ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার ঘটনায় জড়িত ৬ জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যের নামে পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি। শরিফুল এ ৬ জনের মধ্যে একজন। তার সম্পর্কে তথ্য দাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছিল ডিএমপি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্মকমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত শরীফ অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। এছাড়াও সে ব্লগার নীলাদ্রী নীলয়, শান্তা মারিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু, জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নাজিমউদ্দিন সামাদ, ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী তনয় হত্যা এবং প্রকাশক আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি।
ঢামেক সূত্র জানায়, রোববার বিকালে খিলগাঁও থানার এসআই আল মামুন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের নাম শরীফুল উল্লেখ করে সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অভিভাবক ছাড়া এ নামে লাশের সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস মোর্শেদ। পরে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা (২৫) হিসাবে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন হয়। নিহত শরীফুলের শরীরে ছিদ্রের মতো দেখতে ১০টি জখম ছিল।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এমএস/এসআই