
ঢাকা: দক্ষিণখানের আশকোনার সূর্যভিলা নামের বাড়িটিতে নিহত ১৪ বছরের কিশোর আফিফ কাদেরী সম্পর্কে পুলিশকে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে ওই এলাকার এক কিশোর সবজি বিক্রেতা।
ওই কিশোরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ। পুলিশকে সে জানিয়েছে, সবজি বিক্রি করতে প্রতিদিনই ওই বাড়িতে আসতো। এক পর্যায়ে শহীদের (আফিফ কাদেরী) সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। সে, শহীদ ও ওবায়দুল্লাহ নামের আরেক কিশোর প্রায়ই ওই বাড়ির ছাদে ব্যাডমিন্টন খেলতো।
সবজি বিক্রেতা কিশোর জানায়, শহীদ তাদের বলতো, জিহাদের পথে আসো, নইলে বেঁচে থাকতে পারবা না। তোমাকে অস্ত্র চালানো শিখতে হবে, বোমা বানানো শিখতে হবে। আমি এসব কিছু করতে পারি।
বাড়িটিতে কারা যাতায়াত করতো জানতে চাইলে পুলিশকে ওই কিশোর বলে, ওই বাড়িতে দুইজন ব্যক্তি নিয়মিত আসা যাওয়া করতো। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তারা আমাকে শহীদের সঙ্গে মিশতে দিতো না। বাড়ির মহিলাদের বলতো আমাকে যেন বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু শহীদ তাদের সবার কাছে আমাকে বন্ধু বলে পরিচয় করিয়ে দিত।
প্রসঙ্গত শুক্রবার রাতে সূর্যভিলা নামের ওই বাড়িটিতে জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায় পুলিশ। পরে রাত দুইটার দিকে বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়। জঙ্গিদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সকালে ওই বাসা থেকে রূপনগরে নিহত জঙ্গি জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা ও তার মেয়ে এবং জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষা ও তার সন্তান আত্মসমপর্ণ করে। কিন্তু ভেতরে রয়ে যান জঙ্গি সুমনের স্ত্রী, জঙ্গি ইকবালের সাত বছরের মেয়ে এবং তানভীর কাদেরীর ১৪ বছরের ছেলে আফিফ। তাদের কাছে আত্মঘাতী বা সুইসাইডাল ভেস্টসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক আছে বলে জানতে পারে পুলিশ।
দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের অসংখ্যবার আত্মসমর্পণের আহবান জানায় পুলিশ। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত না করলে ভেতরে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়। এক পর্যায়ে দরজা খুলে ওই নারী জঙ্গি সাত বছরের মেয়েটিকে নিয়ে বের হয়। তারা পার্কিংয়ের দিকে এগিয়ে আসে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আবারো আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু তিনি বাম হাতে শিশুটিকে এগিয়ে ধরে, ডান হাত উপরে তোলার ভঙ্গি করে হাত নামিয়ে কোমরে রাখা বিস্ফোরকে চাপ দেন। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই নারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় পুলিশ।
তখনো জঙ্গি তানভীরের কিশোর ছেলে ভেতরেই অবস্থান করছিলো। সে আত্মসমর্পণ না করায় পুলিশ তাকে নিস্তেজ করতে গ্যাস ছোঁড়ে। একপর্যায়ে সে ভেতর থেকে গুলি করে ও গ্রেনেড ছোঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এ সময় ওই কিশোরের মৃত্যু হয়।
প্রতিবেদন: প্রীতম সাহা সুদীপ, সম্পাদনা: জাহিদ