ঢাকা: ঋতুবৈচিত্রময় প্রকৃতি ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলেছে আমাদের বিস্মিত হবার ক্ষমতা। রোদ-মেঘ-বৃষ্টি আর শৈত্য প্রবাহের নিয়মমাফিক লুকোচুরি খেলা দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি, মেনে নিতে শিখেছি অদূর অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে। বন্যা, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প বা টর্নেডো- সবই স্বাভাবিক আমাদের জন্য; যেমন স্বাভাবিক সড়ক দূর্ঘটনা, মৃত্যু, হত্যা, গুম, লুট আর বুদ্ধিজীবিদের নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ আচরণ।
এইতো, কিছুদিন আগেও সূর্যের তেজে চোখ খোলা রাখা যেতো না— ছাতা হাতে হাঁটতে হতো রাস্তায়; হুট করেই সেই ছাতা হয়ে গেলো বৃষ্টি প্রতিরোধক। প্রকৃতি ও তাপমাত্রার এই রাতারাতি পরিবর্তন পবিত্র রমজান মাসে সংযমী মুমিন বান্দাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহও হতে পারে, তবে বর্ষাকালও কিন্তু আজ কড়া নেড়েছে বাংলা মায়ের জীর্ণ দুয়ারে; হয়তো সেই আগাম বার্তাই ঘোষিত হচ্ছিলো কিছুদিন যাবৎ!
আজ পহেলা আষাঢ়। প্রেয়সীর চুলে কদম গুঁজে দেয়ার দিন, আজ প্রিয়জনের জন্য ছাতা, রেইনকোট আর প্লাস্টিক বুট কিনে উপহার দেয়ার দিন। বৈচিত্রময় আবহাওয়া ভ্রাম্যমাণ নাগরিক জীবনের জন্য কোন বিস্ময় আনতে ব্যর্থ হলেও একগুচ্ছ কদম ফুল বা বৃষ্টি বিলাসিত উপহার তাক লাগিয়ে দেবে কিছু ভাগ্যবান ব্যক্তিদের; আত্মভোলা মনগুলোকে মনে করিয়ে দেবে, আজ বর্ষার প্রথম দিন।
তাদের কেউ কেউ হয়তো এ উপলক্ষে একঘেয়ে বর্ষণ উদযাপন করতে চাইবে, লোকাল বাসের জানালা টেনে দেবার আগে বৃষ্টির ছাট উপভোগ করবে কয়েক সেকেন্ড। কেউ হয়তো ছাতা বুঁজে শুধুই ভিজবে, স্মৃতিচারণ করবে ফুটবল আসক্ত শৈশব ও প্রথম প্রেমের কৈশোরের। প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে বৃষ্টি নিতান্তই এক অজুহাত, এক ছাতার নীচের আশ্রয়টুকু যেন সংসারের পূর্বপ্রস্তুতি।
বর্ষার প্রথম দিনকে বরণ করে নিতে নানান আয়োজনে মাতে দেশব্যাপী শিল্প সংগঠনগুলো। তাছাড়া ইতিহাসের হাত ধরে আসে রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষা উৎসব। শহুরে জীবনের ভোগান্তি কমাতে (অথবা বাড়াতে) সিটি কর্পোরেশন মাতে রাস্তা খনন উৎসবে। শহরের রাস্তায় মেলে জলযান ভ্রমণ বা হাঁটু পানি সাঁতরে পার হবার অভিজ্ঞতা।
টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলোতে থাকে বর্ষণসিক্ত বিশেষ অনুষ্ঠান। জৈষ্ঠের খরতাপে ওষ্ঠাগত বনানীতে শুরু হয় সবুজের উৎসব। ভেজা ভেজা ফুলে ভরে ওঠে গাছের ডাল, পাতার ডগায় ঝুলে থাকে আকাশের এক ফোঁটা অশ্রু। মাটির ওপর চাপতে শুরু করে পলিমাটির আস্তর, কিনারে কিনারে পূর্ণ নদী আর পুকুর ফিরে পেতে শুরু করে হারানো যৌবন। সে উদ্যমী যৌবনের তাড়না কখনো নষ্ট করে ক্ষেতের ফসল, কখনো বা অকাল বজ্রপাতে খুন হয় বার্ধক্যগ্রস্থ গাছ। সবশেষে গরম চায়ের কাপে ফিরে আসে তৃষ্ণার্ত ঠোঁট।