
ঢাকা: বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে কিছুটা বেগ পোহাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে কিছুটা বেগ পোহাতে হবে। তবে আমরা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। একদিন হয়তো এ অর্জন আমরা করবো।’
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৭ উপলক্ষে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাষা ব্যবহারে সকলকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বাংলা শব্দের বানান ও উচ্চারণ সর্ম্পকে আরো সতর্ক হতে হবে।ইদানিং বাংলা বলতে গিয়ে ইংরেজি বলার একটা বিচিত্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক ছেলে-মেয়ের মাঝে এখন এটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে যেন তাদের মর্যাদাই থাকে না- এমন একটা ভাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের বেরিয়ে আসতে হবে। যখন যেটা বলবে সঠিকভাবেই উচ্চারণ করবে এবং বলবে।
ভাষাকে বিকৃত করবে না। টেকনোলজি ও যোগাযোগের জন্য অন্য ভাষা শিখতে হবে, তবে বাংলা ভুলে নয়।’
মাতৃভাষার মর্যাদা বাড়াতে বিএনপি কোনো উদ্যোগ নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের শুরু করা মাতৃভাষা ইনিস্টিটিউটের কাজও বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ তাদের কাছে মাতৃভাষা গুরুপ্তপূর্ণ নয়।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে কানাডায় কিছু মানুষ মাতৃভাষা দিবস নিয়ে উদ্যোগ নেয়। যার মধ্যে দু’জন বাঙালি ছিল রফিক ও সালাম। পরে আওয়ামী সরকারের করা প্রস্তাবে ইউনেস্কোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি যা কিছু অর্জন করেছে তা আত্মত্যাগের বিনিময়ে। একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করা, যার চেতনায় স্বাধীনতা এসেছে। শহিদ মিনারে বারবার আঘাত এসেছে কিন্তু ইতিহাস বিকৃত করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আইন করা হয়। আর এ বছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিটিউট উদ্বোধন করা হয়। ইনিস্টিটিউট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা করছে। ভাষার গোড়াপত্তন তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক মাতৃভাষা হারিয়ে গেছে।কিন্তু আমরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিকে তাদের মাতৃভাষা ধরে রাখার সুযোগ করে দিয়েছি। দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা সংরক্ষণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ বছর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিভাষীদের ২৫ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। যাতে করে তারা তাদের মাতৃভাষা ধরে রাখতে পারে।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনেস্কোর ভাষা বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যানভিটা অ্যাবি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, ঢাকায় ইউনস্কো প্রতিনিধি বিট্রেস কালডুন, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এবং আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী।
প্রতিবেদন: প্রীতম সাহা সুদীপ, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ