
নিজস্ব প্রতিবেদক । নিউজনেক্সট বিডি ডট কম
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও নানা প্রতিকূলতায় ৩০ শয্যা নিয়ে সেবার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে অনেক বছর। একটা সময় চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স, কর্মচারী, আয়া, সুইপারসহ অন্যান্য জনবল স্বল্পতা ছিলো তা তুলনামূলক কমেছে। এমনকি ২০২o সাল পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার দুরে বরিশাল যাতায়াতে রোগীদের জন্য ছিল একটি মাত্র অচলপ্রায় এ্যাম্বুলেন্স। সেবা ব্যাহত হবার নানা ঘটনাও তখন সংবাদপত্রে এসেছে।
তবে এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বানারীপাড়ায় জনস্বাস্থ্যের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন বরিশাল ২ (বানারীপাড়া -উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম। তার কর্ম পরিকল্পনায় ফলাফল ও এসেছে, ২০২২ সালে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫৩ জন প্রসূতির সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর চলতি বছরে এপ্রিল মাস পর্যন্ত হয়েছে ১০০টির বেশি অস্ত্রোপচার। বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পুরোপুরি ৫০ শয়্যা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তার মধ্যে ২০ শয়্যায় আছে চাহিদামত সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধার ব্যবস্থা। অত্যাধুনিক এ্যাম্বুলেন্স এসেছে। নিয়মিত থাকছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
শুধু তাই নয় বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্রেষ্ঠ উপজেলা ক্যাটেগরিতে সরকারের কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছে।
এমপি হওয়ার পর হাসপাতাল ব্যবস্থপান কমিটির দায়িত্ব পান সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম।করোনাকালীন সময়ে আলাদা ইউনিটও করা হয়েছিল।মাসিক সভায় নিয়মিত পাওয়া যায় এবং সবদিকে খেয়াল রাখেন বলে হাসপাতাল ব্যবস্থপান কমিটির অন্য সদস্যরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
ঈদের দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরে কসাই রজব আলীর সাথে কথা হয়, তিনি মাংস কাটতে গিয়ে আঙ্গুল কেটে ফেলেছেন, বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ব্যান্ডেজ ও প্রাথমিক সেবা নিয়ে বের হয়ে হাটতে হাটতে রজব আলী বলেন, ‘ভাবছিলাম ঈদের দিনটা মন হয় বরিশালে গিয়া হাসপাতালে দৌড়া- দৈউড়ি করতে হইবে কিন্তু সব এখানেই করে দিলেন ডাক্তার, আমি তো ভাবছি ডাক্তারই পামুনা। আলম ভাই এমপি হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালডার চেহারাই পাইল্ডা গ্যাছে’।
বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ বলেন, ‘আপনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান দেখলে বুঝবেন, স্বাস্থ্য সেবায় আমাদের চ্যালঞ্জ অনেক কিন্তু বানারীপাড়ায় যা আমরা করতে পেরেছি তা এমপি মহাদয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপে। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে বানারীপাড়া উদাহরণ হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শূন্য পদ পূরনে বেশ কয়েকবার স্যার ও আমার কথা হয়েছে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি এবং শুনেছি ব্যক্তিগতভাবে এমপি মহাদয় মন্ত্রীর সাথে দেখা করে এসব কথা বলেছেন। প্রতিকূলতার কথা বললেন বলে বলছি, অ্যানেস্থেশিয়া কেউ নেই কিন্তু প্রসূতি অস্ত্রোপচার করেছি প্রায় ৩০০ জনের, আমরা নিজেরা নিজেদের তৈরি করেছি।’
গতানুগতিক যে অভিযোগ ছিলো সরবরাহ করা খাবারের মান, চিকিৎসকদের অনুপুস্থিতি, কর্মকরতাদের আচরণ এমনকি সেবা ও সেবার মান নিয়ে জনমনে যে চাপা অসন্তুষ্টি ছিল কিন্তু তা খুব সফল ভাবে কাটিয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন; ইলুহার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আয়নাল উদ্দিন।
গত কয়েক বছরে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তার সবই আছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকায় স্বরূপকাঠী ও উজিরপুর থেকে আসা রোগীর সংখ্যা বেশ।
‘অজস্র অভিযোগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে-এর চিত্র পাল্টানোর কৃত্বিত আমাদের বরিশাল ২ (বানারীপাড়া -উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলমের, তার নিজের বাসাও উপজেলায়, উনার থেকে বেশি এখানের মানুষের সুখ দুঃখ অন্য কারো বোঝার কথা না। এমপি হইয়া প্রথমেই ধরছে হাসপাতাল। কতকিছুই নাই শুনি হাসপাতালে কিন্তু রুগী ফেরত যায়না, আগের মত বরিশাল ও যাওয়া লাগেনা। আলম ভাই এমপি হওয়ার আগেও গ্রাম থেকে কেউ চিকিৎসার জন্য ঢাকা গেলে খোঁজ খবর নিত। বানারীপাড়া আসলে তিনি হাসপাতালে আসবেনই’ আলাপচারিতায় বলছিলেন বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপন হালদার।
শূন্যপদ পূরনে করনীয় নিয়ে প্রশ্ন করলে সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম বলেন ‘ শূন্যপদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ইস্যু, আমার করনীয় ছিল বলা ও চাওয়া চেয়ে যাচ্ছি, প্রতিকূলতা যাই থাকুক আমার ইচ্ছা স্বল্পআয়ের মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমানো এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেকে নিয়ে জনমনে যে ভাবনা; হবেনা, পাবোনা, ডাক্তার নাই, সেখান থেকে বের হয়ে একটা মডেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারকে উপহার দেওয়া, ৩০০টির মত প্রসূতির অস্ত্রোপচার মন্ত্রণালয়কেও ভাবিয়েছে কি ভাবে প্রান্তিকে আরও বেশি সেবা প্রদান করা যায়।’
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার-২০২০’ এ শ্রেষ্ঠ উপজেলা ক্যাটেগরিতে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস ক্যাটেগরিতে দুটি সম্মানসূচক পুরস্কার লাভ করে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা। বানারীপাড়ার ৮ ইউনিয়নে ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিকও পরিচালিত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে চাখার ইউনিয়নে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতাল এবছর উদ্বোধন করা হবে।