
রোবেল মাহমুদ, গফরগাঁও: রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে জম্মগ্রহণ করেন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার। ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে বের হওয়া সেই ঐতিহাসিক মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।
এই মহান ভাষা শহীদের স্মরণে সরকারিভাবে তার নিজ গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জব্বার নগর। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত গত ১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।
২০০৭ সালের ২৫ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের সভায় ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের লক্ষ্যে তার গ্রাম জম্মস্থান পাচুঁয়ার নাম পরিবর্তন করে জব্বার নগর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই বছরের চার এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রামের নাম পাচুঁয়ার পরিবর্তে জব্বার নগর নামকরণের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের নিকট চিঠি পাঠানো হয়।
২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী পাঁচুয়াতে নির্মিত ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নামে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল গ্রামের নাম জব্বার নগর বলেও ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রায় এক দশকেও সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, ‘এখনও জব্বার নগর হিসাবে পরিচিতি না পাওয়ায় সবাই পাঁচুয়া নামই ব্যবহার করেন। নাগরিকত্বসহ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া নানা সনদ ও কাগজপত্রে গ্রামটিকে পাঁচুয়া হিসাবেই লেখা হচ্ছে।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাবুল আলম বলেন, ‘তারা এ বিষয়ে কোনো গেজেট পাননি। এ কারণেই গ্রামের নাম পাঁচুয়া লিখছেন।’ গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু জানান, ভাষা শহীদের গ্রামের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তার কার্যালয়ে এখনো আসেনি।
ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য এএইচএম আসাদ নয়ন এক একর ১৮ শতাংশ জমি দান করে। পরে ২০০৮ সালে জেলা পরিষদ ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করেন। আসাদ নয়ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানে ১৯৯৮ সালে ভাষা শহীদের পৈতৃক ভিটা সংলগ্ন স্থানে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
বর্তমানে শহীদের নামে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারে চার হাজার ১৩৭টি মূল্যবান বই রয়েছে। তবে জাদুঘরে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের ব্যবহৃত কোনো জিনিসপত্র নেই। নৈশ প্রহরী ও এমএলএস পদ শূণ্য থাকায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। কেয়ারটেকার দেলোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করেন।
জাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান কায়সারুজ্জামান বলেন, ‘এই স্মৃতি জাদুঘরে দৈনিক পত্রিকা সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাঠক কমছে দিন দিন। পত্র-পত্রিকা থাকা অবস্থায় প্রতিদিন স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষকসহ অসংখ্য পাঠক এখানে আসত। এছাড়া আগের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এর কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন, বেহাল যাতায়াত ব্যবস্থা ও শহীদের স্মৃতি বিজরিত কোনো স্মারক না থাকায়। ভাষা শহীদ জব্বারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা বাদল মিয়া বলেন, ‘সরকারি তদারকি আর উদ্যোগের অভাবে স্থানটি দর্শনীয় হয়ে উঠতে পারেনি’।
জমি দাতা ও ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচএম আসাদ নয়ন বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারীর দিনেই এ এলাকায় জন মানুষের ঢল নামে। সে দিন রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এরপর আর খোঁজ নেয় না কেউ।’
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ