
আজ ৩০ চৈত্র ১৪২৩। বাংলা বছরের শেষদিন। শেষদিন ঋতুরাজ বসন্তেরও। আজ বিদায় নেবে বাংলা ১৪২৩ সাল। সেই সঙ্গে বসন্তকে বিদায় জানিয়ে বাঙালির সামনে আগামীকাল হাজির হচ্ছে একটি নতুন বছর ১৪২৪।
শুক্রবার সারাদেশের বাঙালিরা মেতে উঠবে বর্ষবরণ উৎসবে। নতুন দিনের আগমনী বার্তা নিয়ে বৈশাখ আসবে বাঙালির মাঝে।
চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে লোকোৎসব। বাংলা মাসের শেষ দিনটিকে ঘিরে লোকাচার অনুসারে নানা ক্রিয়াকর্ম করে থাকে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে প্রধানত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এটি নানা আড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে।
কালক্রমে বাঙালির সংস্কৃতিতেও কম বেশি লেগেছে বদলের বাতাস। আগে গ্রামবাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে আচার-অনুষ্ঠানের অন্ত ছিল না। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা মেয়ে-জামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসতো। অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থরা সবাইকে নতুন জামা-কাপড় দিতো এবং খাবার-দাবারের আয়োজন করতো। সেই সংস্কৃতি এখন মূলত বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরেই।
চৈত্র সংক্রান্তি বাংলার লোক সংস্কৃতির এমন এক অনুষঙ্গ যা সর্বজনীন উৎসবের আমেজে বর্ণিল। বছরের শেষদিনে যেমন নানা আয়োজনে বর্ষকে বিদায় জানানো হয় তেমনি চৈত্রের শেষ দিনে বৈশাখ বন্দনায় মেতে ওঠে বাঙালি। নব আনন্দ বাজুক প্রাণে, এই মঙ্গল কামনার মাধ্যমে বিগত বছরের গ্লানি মুছে ফেলতে আবহমান বাঙালি আজ মেতে উঠবে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবে।
চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। এই উপলক্ষে একগ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়, একজন শিব ও একজন গৌরী সেজে নৃত্য করে এবং অন্য ভক্তরা নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতি সেজে শিব-গৌরীর সঙ্গে নেচে চলে। এ সময়ে শিব সম্পর্কে নানারকম লৌকিক ছড়া পাঠ করা হয় যাতে শিবের নিদ্রাভঙ্গ থেকে শুরু করে তার বিয়ে, কৃষিকর্ম ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ থাকে।এই মেলাতে সাধারণত শূলফোঁড়া, বানফোড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়ক গাছের ঘোরা, আগুনে হাঁটা প্রভৃতি সব ভয়ঙ্কর ও কষ্টসাধ্য দৈহিক কলাকৌশল দেখানো হতো। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরণের খেলা একেবারেই কমে গেছে।
বাঙালি যে দিন চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে থাকে সেদিন আদিবাসী সম্প্রদায় পালন করে থাকে তাদের বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অণুষ্ঠান-বৈসাবী।
সারাদেশের মত বছরের শেষ দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করেন শাঁখারীবাজারের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন করবে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আজ থাকছে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে নানা আয়োজন।
গ্রন্থনা: কাওসার আহমেদ।