
ঢাকা: দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে এই স্বস্তি নিয়ে জাতি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার ভোর থেকেই মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বাইরে মাজার রোড ও আশেপাশের এলাকা এবং বায়েরবাজার বদ্ধভূমি এলাকায় জনতার ঢল নামে।
এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মরণ করতে আসা সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের।
তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে পথে হাটছে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াবে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় বাধা ছিল। এখন সে বাধা দূর হয়েছে। অনেকে বলেন, দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই তারা শিখিয়ে গেছেন।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে শহীদ পরিবারের সন্তানরা বলেন, এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তার পর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হাজারো মানুষ ভিড় করেন মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে। সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে সবার দাবি ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাকারি দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে, জাতি আর এ কলঙ্ক বহন করতে চায় না। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা সহ সে দেশের সকল পণ্য বর্জন করতে হবে।
সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেদীর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিস, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামীম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বর ভবনের সামনে রক্ষিত জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর স্মৃতিস্তম্ভ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেয়া হয়। পরে একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা।
এরপর শ্রদ্ধা জানান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, দলের সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: জাহিদ