
ঢাকা: তিরিশের দশকে পাঁচ মহান কবির একজন বিষ্ণু দে। বিশ শতকের বাংলা কবিতার ধারায় তাকে বলা হয় দ্বান্দ্বিক চেতনার শিল্পী। বাঙালির সহজিয়া কাব্যধারায় এ কারণেই তিনি তিরিশের তথা অন্য সব কবির চেয়ে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
কবি জীবনের শুরুতেই শিল্প ও দর্শনের তত্ত্বজ্ঞানে তিনি রচনা করেন ‘উর্বশী’ ও ‘আর্টেমিসে’র কবিতাগুলো। সমন্বয়ের সাধনায় গোটা কবি জীবনে বিষ্ণু দে পুব ও পশ্চিমের, উর্বশীর সঙ্গে আর্টেমিসের এবং গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় পুরাণের দীর্ঘ সময়-কালের লুপ্ত ইতিহাসের সত্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তার মানসদৃষ্টি প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন অতীত ও ভবিষ্যতের বিপুলা পটভূমিতে।
১৯০৯ সালের ১৮ জুলাই কবি বিষ্ণু দে কলকাতার প্রসিদ্ধ শ্যামাচরণ দে বিশ্বাসের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আধুনিক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও চিন্তাশীল এই ব্যক্তিত্বের আজ ১০৯ তম জন্মদিন। বাংলা কবিতার মহান এই কবির জন্মদিনে পাঠকদের জন্য কবির কয়েকটি কবিতা তুলে দেয়া হলো।
জল দাও
তোমার স্রোতের বুঝি শেষ নেই, জোয়ার ভাঁটায়
এ-দেশে ও-দেশে নিত্য ঊর্মিল কল্লোলে
পাড় গড়ে পাড় ভেঙে মিছিলে জাঠায়
মরিয়া বন্যায় যুদ্ধে কখনো-বা ফল্গু বা পল্বলে
কখনো নিভৃত মৌন বাগানের আত্মস্থ প্রসাদে
বিলাও বেগের আভা
আমি দূরে কখনো-বা কাছে পালে-পালে কখনো-বা হালে
তোমার স্রোতের সহযাত্রী চলি, ভোলো তুমি পাছে
তাই চলি সর্বদাই
যদি তুমি ম্লান অবসাদে
ক্লান্ত হও স্রোতস্বিনী অকর্মণ্য দূরের নির্ঝরে
জিয়াই তোমাকে পল্লবিত ছায়া বিছাই হদৃয়ে
তোমাতেই বাঁচি প্রিয়া
তোমারই ঘাটের কাছে
ফোটাই তোমারই ফুল ঘাটে-ঘাটে বাগানে-বাগানে।
তুমিই মালিনী
তুমিই মালিনী, তুমিই তো ফুল জানি।
ফুল দিয়ে যাও হৃদয়ের দ্বারে, মালিনী,
বাতাসে গন্ধ, উৎস কি ফুলদানি,
নাকি সে তোমার হৃদয়সুরভি হাওয়া?
দেহের অতীতে স্মৃতির ধূপ তো জ্বালি নি
কালের বাগানে থামে নি কো আসা যাওয়া
ত্রিকাল বেঁধেছ গুচ্ছে তোমার চুলে,
একটি প্রহর ফুলহার দাও খুলে,কালের মালিনী! তোমাকেই ফুল জানি,
তোমারই শরীরে কালোত্তীর্ণ বাণী,
তোমাকেই রাখী বেঁধে দিই করমূলে
অতীত থাকুক আগামীর সন্ধানী–
তাই দেখে ঐ কাল হাসে দুলে দুলে
সে কবে
সে কবে গেয়েছি আমি তোমার কীর্তনে
কৃতার্থ দোহার।
পদাবলী ধুয়ে গেছে অনেক শ্রাবণে;
স্মৃতি আছে তার।
রৌদ্র-জলে সেই-স্মৃতি মরে না, আয়ু যে
দুরন্ত লোহার।
শুধু লেগে আছে মনে ব্যথার স্নায়ুতে
মর্চের বাহার।।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/টিএস