
স্পোর্টস ডেস্ক: খুব বেশীদিন আগের কথা নয়, মাত্র দুই বছর আগেই জার্মানি ফুটবল বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলে-খেলায় মেতে উঠেছিল। নেইমারবিহীন ব্রাজিলকে গুনে গুনে সাত গোল দিয়েছিল জোয়াকিম লো’র শিষ্যরা। এতোটা অসহায় ফুটবলের ইতিহাসে কখনোই দেখা যায়নি পেলের দেশকে।
বিশ্বকাপের পর আবারো সেই জার্মানির মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল। রিও অলিম্পিকের ফুটবলের ফাইনালে জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের ম্যাচে মাঠে নামবে নেইমারবাহিনী। বিশ্বকাপে হারের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেয়ার সুযোগ এসেছে ব্রাজিলের সামনে। শনিবার রাত আড়াইটায় মারকানায় শুরু হবে হাইভোল্টেজ এ ম্যাচটি।
ব্রাজিল আর জার্মানির একটা জায়গায় দারুন মিল রয়েছে। বিশ্ব ফুটবলে প্রভাব বিস্তার করে রাখা এ দুই দল এখনো পর্যন্ত অলিম্পিক থেকে স্বর্ণ জিততে পারেনি। তাই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই নিজেদের ফুটবল ইতিাহস সমৃদ্ধ করার ম্যাচ। আর এ দুই দলের লড়াইয়ে ফল যাই হোক, অলিম্পিক ফুটবল পেতে যাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন।
অলিম্পিকের আগে ল্যাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ মর্যাদার ফুটবল আসর কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল বাঁধাও দূর হতে পারেনি তারা। ঐ দলে অবশ্য নেইমার ছিলেন না।
অলিম্পিক শুরুর আগেই বার্সেলোনা শিবির থেকে সেলেসাওদের শিবিরে যোগ দেন নেইমার। গ্রুপ পর্বের লড়াইয়েও খুব একটা উজ্জ্বল ছিল না ব্রাজিল। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই যেনো আগুন ঝরা শুরু। সেমির লড়াইয়ে তো কথাই নেই। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে হন্ডুরাসকে বিধ্বস্ত করে ব্রাজিল। ৬-০ গোলে ঐ জয়ে নেইমার জোড়া গোল করেছেন এবং গোল করিয়েছেনও সতীর্থদের দিয়ে। বড় এ জয় দিয়ে সোনার লড়াই নিশ্চিত করার পর স্বাগতিকদের প্রত্যাশাটাও বেড়ে গেছে কয়েকগুন।
এ ম্যাচটি টিম ব্রাজিলের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ নেইমারের জন্য। দেশকে সোনা এনে দিতে পারলে ক্যারিয়ারে অনেক বড় প্রাপ্তি যোগ হবে ব্রাজিলিয়ান এ সেনসেশনের।
তবে লড়াইটা সহজ হবে না একেবারেই। কারণ প্রতিপক্ষ যেখানে জার্মানি, সেখানে ভাবনাতো কিছুটা রয়েছেই ব্রাজিল শিবিরে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা শেষ চারের লড়াইয়ে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে ২-০ গোলের। সব মিলিয়ে এবারের অলিম্পিকে ৫ ম্যাচ থেকে ২১ গোল করে গোলের দিকে সব থেকে এগিয়ে জার্মানরা।
শনিবারের সোনা মিশনের ম্যাচটি শুধু ফাইনালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। বারবার ঘুরেফিরে আসছে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের স্মৃতি। দুই বছর আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এই মারাকানা স্টেডিয়ামেই জার্মানির কাছে ১-৭ গোলের লজ্জায় ডুবেছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। এটা বিশ্বকাপ ইতিহাসে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় হারের লজ্জা। আর তাই ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এটা স্বর্ণ জয়ের সঙ্গে প্রতিশোধ মিশনও। দুই বছর আগের ওই সেমিফাইনালে অবশ্য ছিলেন না নেইমার।
তবে ওই জয় শনিবারের ফাইনালে যে জার্মানদের বড় প্রেরণা, সেটা কিন্তু জানাতে ভোলেননি দলটির ডিফেন্ডার ম্যাথিয়াস জিন্টার। গত বিশ্বকাপের একমাত্র সদস্য হিসেবে ম্যাথিয়াসই এবারের অলিম্পিক দলে সুযোগ পেয়েছেন। পুরনো ব্রাজিলের বিরুদ্ধে নতুন জার্মানি কেমন করবে সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে ম্যাচের আগে জার্মানির ডিফেন্ডার জানালেন, ‘বিশ্বকাপের সেই স্মৃতি নিয়েই আমরা ফাইনাল মাঠে নামব। ফাইনালে উঠেছি এবং পদক পাচ্ছি এতে আমরা খুবই খুশি।’
শনিবার ফাইনাল ম্যাচের পাশাপাশি সেমিফাইনালের দুই পরাজিত দল হন্ডুরাস ও নাইজেরিয়া ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে।
প্রতিবেদন: কবিরুল ইসলাম, সম্পাদনা: সাইফুল ইসলাম