
নাদিম কাদির: চার শতাংশের বেশী ভোট নিয়ে ব্রিটেন ইউরোপিয় ইউনিয়নে ত্যাগ করায় সমগ্র গ্রেট ব্রিটেন ও ইউরোপিয় ইউনিয়নে জুড়ে এখন এক উদ্বেগের বাতাস বইছে। এটি অবশ্যই একটি রোলার কোস্টারের মতো রোমাঞ্চকর নির্বাচন ছিলো। প্রায় প্রতি মূহুর্তেই যার ফলাফল পরিবর্তিত হচ্ছিলো। কিন্তু সকালের নাস্তার সময় হতে না হতেই বিচ্ছেদের জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো এবং মুদ্রা বাজারে পাউণ্ডের মূল্য ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়ে গেলো। একইসাথে স্টকের মূল্য।
প্রথমত, যদি আমরা বাংলাদেশের কথা বলি, আমাদের ইস্যু হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে কোটা মুক্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি। এটা কি পুনরায় বিবেচনা করতে হবে, নাকি অন্যান্য চুক্তিগুলোও পুনর্বিবেচ্য হবে? ব্রিটেনের বিচ্ছেদকামী নেতাদের হাতে ক্ষমতা আসার পর কি সাহায্যের গতি কমে আসবে এবং অভিবাসন কি আরো কঠিন হয়ে যাবে?
এখানকার ভিসা পদ্ধতি এখনই বাংলাদেশীদের জন্য বিব্রতকর। যে কারণে অনেকেই ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করেন, কিন্তু লণ্ডনে যান না। ব্রিটেন যে স্পষ্টত যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা, তা এই গণভোটের জয় থেকেই বোঝা যায়।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশরাও আলাদা হয়ে গেছে। যারা এই জিতে যাওয়ার পক্ষে তারা বলছে চাকরির বাজার ভালো হবে, এশিয়ানদের জন্য বাণিজ্যের সুযোগ আসবে এবং জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা আরও ভালোভাবে সেবা দিতে পারবে।
যারা একসাথে থাকার পক্ষে ছিলো তারা এখন অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, পাশাপাশি পরিবার ভেঙে যাবার দু:খে জর্জরিত। আশংকা করা হচ্ছে অস্থিতিশীল রাজনীতিময় একটি সময় আসন্ন। এরই মধ্যে স্কটল্যাণ্ড বলছে তারা গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে যে, যুক্তরাজ্যের সাথে থাকবে কিনা এবং দ্রুতই উত্তর আয়ারল্যাণ্ডও একইভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
দোষটা পুরোপুরি রাজনীতিবিদদের ওপর বর্তায়। প্রধাণমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, যিনি পদত্যাগ করেছেন, তিনি নিজেই ণভোটের আয়োজন করেছিলেন এই বিচ্ছেদ এবং তার নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব বিষয়ক প্রতিযোগিতা ঠেকাতে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবার লক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা বরিস জনসন তখন বিচ্ছেদে পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন ।
লণ্ডনের বিশ্লেষকগণ বলছেন, ব্রিটিশ রাজনীতি এখন ‘সেন্টার লেফট’ এবং ‘সেন্টার রাইট’ থেকে এক্সট্রিমিস্টদের (চরমপন্থিদের) নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যা ব্রিটেনকে ছোট ও দুর্বল করে তুলবে। দাপ্তরিকভাবে ইইউ থেকে বিভাজনের আগে ব্রিটেন কমপক্ষে আরো এক বছর সময় পাবে। তাই তাদের এটা পুনর্বিবেচনার জন্য আরো সময় আছে যে তারা আসলেই কি এই বিভাজন করবে, নাকি করবে না।
লেখকঃ ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার