
পঞ্চগড়: একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানী হানাদারের বিরুদ্ধে। দুর্গম অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্যের সাথে যুুদ্ধ করে জীবন সায়াহ্নে এসে তাকে হাতে নিতে হয়েছে ভিক্ষার থলি। একদিন যে মুক্তু মিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পথ দেখিয়েছেন আজ সেই মুক্তিযোদ্ধা মুক্তু মিয়াকে দেখার কেউ নেই। বিজয় দিবসে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা উৎসব আনন্দে যোগ দিলেও মুক্তু মিয়াকে বের হতে হয় ভিক্ষার থলি নিয়ে। এবার মুক্তুমিয়াকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম বিজয় দিবসের স্মৃতি স্মারক তুলে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ভিতরগড় মহারাজা দিঘি পাড়ের বাসিন্দা ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার হাতে স্মৃতি স্মারক তুলে দেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল। স্মৃতি স্মারকের পাশাপাশি তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা, ৬ টি কম্বল ও ৫০ কেজি চালের অনুদান মুক্তিযোদ্ধা মুক্তু মিয়ার হাতে তুলে দেন।
বিজয় স্মারক পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন মুক্তু মিয়া। আক্ষেপ করে বলেন, যারা একাত্তরে চুরি ডাকাতি করেছে আজ তারাই মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। আমি যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়েছে, কিন্তু বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কেউ আমাকে ডাকেও না। আজ স্মৃতি স্মারক হাতে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি। এখন মুুক্তিযোদ্ধা সনদটা যদি পেতাম তবে মরেও শান্তি পেতাম।
জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তু মিয়ার কথা জানতে পেরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার হাতে নগদ টাকা, চাল ও কম্বল তুলে দিয়েছি। ভুলবশত তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় এখনো অন্তর্ভূক্ত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সনদ না থাকলেও এবার বিজয় দিবসের আগেই তার হাতে বিজয় দিবসের স্মৃতি স্মারক তুলে দিয়েছি। আমাদের প্রত্যেককে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সকলকে এই ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধার সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল আলীম খান ওয়ারেশী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গোলাম আজম ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা মুনতাজেরী দীনা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন: মো. লুৎফর রহমান, সম্পাদনা: প্রণব