
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা;
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে শহরাঞ্চলে ওয়ার্ড ও গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পর্যায়ে বাস্তবায়িত প্রথম দফা গণটিকা কার্যক্রমের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার টিকাদান কেন্দ্রগুলোয় ছিল ভ্যাকসিন প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় ।
সরবরাহের ঘাটতির কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও জীবন রক্ষাকারী প্রতিষেধক পেতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, “আমরা একবারেই সবাইকে টিকা দিতে পারবো না। তবে সবাই টিকা পাবেন। ধৈর্য ধরতে হবে।”
“করোনার টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে,” উল্লেখ করে ডেঙ্গু ও করোনা মহামারিতে চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি আরো বলেন, “বড় দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার চার-পাঁচ গুণ বেশি টিকা মজুত করেছে।’
এদিকে ঢাকায় গণটিকা কার্যক্রমের শেষ দিনে করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পাওয়ার আশায় অনেকে বুধবার দিবাগত রাতটি টিকাকেন্দ্রেই কাটিয়েছেন।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মিরপুরের উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে তানিয়া আক্তার, নুপূর আক্তার, বিউটি বেগম, সোনিয়া আক্তারসহ এমন একাধিক টিকাপ্রার্থীর সাথে কথা বলেছে নিউজনেক্সটবিডি।
রাত থেকে অপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকেও টিকা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা জানান, কেন্দ্রে সেচ্ছাসেবকের দায়িত্বপালনকারী ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের স্বজনরা ‘সিরিয়াল’ ভেঙ্গে টিকা নিয়েছে বলেই এত দেরি।
একই কারণে অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।
যদিও সেখানে কর্তব্যরত সেচ্ছাসেবক জামাল হোসেন বিপ্লব ও সাজিদুল ইসলাম লাডডা এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
যদিও স্বজনদের কাছ থেকে এমন আবদার পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন লাডডা । তবে “টিকাদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি করার সুযোগ নেই,” বলেন বিপ্লব।
এ নিয়ে টিকাপ্রার্থী ও সেচ্ছাসেবকদের বাদানুবাদও প্রত্যক্ষ করেছে নিউজনেক্সটবিডি।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান সেচ্ছাসেবক হিসেবে সক্রিয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে নিউজনেক্সটবিডিকে বলেন, “আগামীতে তাদের আরো বেশি সক্রিয় থাকতে হবে।”
“পরবর্তীতে সবাই টিকা পাবেন,” বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
মিল্কভিটা রোডের বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে এর আগেও একদিন এসে ফিরে গিয়েছেন আব্দুল আলিম। তাই বৃহস্পতিবার ভোররাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড নিয়েছেন জানিয়ে নিউজনেক্সটবিডিকে তিনি বলেন, “আশা করছি আজ টিকা পাব।”
তবে গত দুইদিন ধরে ভোররাতে ওই কেন্দ্রে এসেও টিকার কার্ড না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন শাহানা আক্তার এবং সঙ্গীতা খাতুন। তারা ওই এলাকার ভোটার হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষেধক দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিউজনেক্সটবিডিকে বলেন, “দারোয়ান আমাদের ঢুকতেই দিচ্ছিল না।”
কেন্দ্রটির সেচ্ছাসেবক রেজাউল করিম রাজুর দাবি, সেখানে প্রতিদিন সাড়ে তিনশ টিকা দেওয়া হলেও প্রায় এক হাজার দুইশ টিকা প্রত্যাশী ভিড় করে। “অমানবিকভাবেই তাদের তাড়িয়ে দিতে হয় আমাদের। কিছু করার থাকে না,” নিউজনেক্সটবিডিকে বলেন তিনি।
আবার রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ টিকাকেন্দ্রের মতো কিছু কেন্দ্রে মোটেও টিকা ছিল না। সেখানে টিকা না পেয়ে ফেরত গিয়েছেন অনেকে।
কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও শিক্ষালয়টির কর্মচারীরা জানিয়েছেন, প্রথম তিনদিন পর আর সেখানে টিকা আসেনি।
প্রথম দফায় শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সারাদেশের চার হাজার ছয়শ ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায এবং সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর ৪৩৩টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম চলেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বুধবার বিকেল পর্যন্ত দুই কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৫১ জন করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
এদিকে বেসরকারি খাতে করোনাভাইরাসের টিকা না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। সংসদ সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর তারা বলেছে, বেসরকারি খাতে টিকা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।
পাশাপাশি টিকা আমদানির ক্ষেত্রে টিকার মেয়াদ যাতে ছয় মাস থাকে, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২১৫ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, এর মধ্যে পুরুষ ১০৭ জন এবং নারী ১০৮ জন।
অধিদফতরের ভাষ্য, দুই মাস আগেও করোনায় মৃত্যুর ৮০ শতাংশই ছিল পুরুষ এবং নারীর মৃত্যু ছিল ২০ শতাংশ। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৫১ শতাংশ নারী এবং ৪৯ শতাংশ পুরুষ মারা গেছেন।
“এটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়,” বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
নিউজনেক্সটবিডি/এসকে/