
বিশেষ প্রতিনিধি,
ঢাকাঃ সাধারনত কোনো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ কিংবা নির্মাণকাজ শুরুর সময় মন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধনের রেওয়াজ থাকলেও, এবার ভবন ভাঙার ক্ষেত্রেও সেরকমটাই দেখা গেল। রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার ক্ষেত্রে এমন বিরল দৃষ্টান্তই স্থাপণ করলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
পূর্বনির্ধারিত সূচী অনুযায়ী, বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙার এই আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী। একটি ‘কংক্রিড ব্রেকার’ মেশিনের সাহায্যে বিজিএমইএ ভবনে প্রথম ছিদ্রটি করেন মন্ত্রী নিজের হাতে।
এসময় ফায়ার সার্ভিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজউক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ভবন ভাঙার কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনের পর, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শ ম রেজাউল করিম জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই ভবনটি ভাঙার কাজ শেষ হবে। পাশাপাশি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাতিরঝিল প্রকল্পের বিজিএমইএ ভবন ছাড়াও যতগুলো অবৈধ স্থাপনা আছে সবগুলোই অপসারণ করা হবে।
রেজাউল করিম বলেন, “আমরা হাতিরঝিল প্রকল্পের বিষফোড়াখ্যাত বিজিএমইএ ভবন অত্যাধুনিক ডিভাইস দিয়ে ভাঙার পরিকল্পনা করেছিলাম। ভবন ভাঙতে প্রথমবারের মতো ডিনামাইটের ব্যবহারের চিন্তা ছিলো আমাদের। তবে পরিবেশের কথা আর এ ভবনের পাশে গড়ে ওঠা পাঁচতারকা হোটেলের বিষয়টি মাথায় নিয়ে ডিনামাইট ব্যবহারের চিন্তা থেকে সরে এসেছি। এখন পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে সনাতন পদ্ধতিতে (শাবল-হাঁতুড়ি) দিয়ে ভবন ভাঙার কাজটি পরিচালিত হবে। এতে আমরা এ ভবন ভাঙার কাজ যে প্রতিষ্ঠানকে (ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ) দিয়েছি তাদেরকে ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দুটি টিম তাদের কাজ দেখভাল করবে, প্রতিটি দিনে তারা থাকবে। ছয় মাসের মধ্যেই তাদের কাজ শেষ করতে হবে।”

মন্ত্রী বলেন, “ভবন ভাঙার পর যেসব বর্জ্য জমা হবে প্রতিষ্ঠানটি সেগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সাময়িক রাখবে। পরে সেগুলো শহরের বাইরে ফেলে দেওয়া হবে। আমরা শুধু বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করছি না, হাতিরঝিল প্রকল্পের মধ্যে যতোগুলো অবৈধ স্থাপনা আছে সবগুলো অপসারণ করা হবে। আমরা চাই হাতিরঝিলে পানির গতি বৃদ্ধি পাক, সুন্দর ঢাকা গড়ে উঠুক।”
রেজাউল করিম আরও বলেন, “এই ভবন ভাঙার পর হাতিরঝিল প্রকল্পের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এ প্রকল্পের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। এর আগে হাতিরঝিল প্রকল্পের পানিতে দুর্গন্ধ থাকতো এখন সেটা নেই। আমাদের এ প্রকল্পে প্রতিদিন পানি বিশুদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা চাই একটি সুন্দর ঢাকা গড়তে। এজন্য সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হবে।”
ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক নসরুল্লাহ খান রাশেদ জানান, আগামী সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে পুরোদমে ভবন ভাঙার কাজ কাজ শুরু হবে; ভবন ভাঙার কাজে বুলডোজার, এক্সেভেটর, শাবল ইত্যাদি ব্যবহার করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএ’র বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ‘ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’ পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

পরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বানের পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পায় ‘সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। ওই সময় সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেয় রাজউক। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ’ কাজ দেয় রাজউক। তাদের দরপত্রে টাকার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এখন তারা এক কোটি দুই লাখ টাকায় ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করবে।
এএমএন/