
ডেস্ক: বাইশতম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন মরক্কোর পথে। তহবিল স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধে কর্মপন্থা ঠিক হবে এই মারাক্কেশ সম্মেলনে। বিশ্বের ১৯৬টি দেশ এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে।
এবারের সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করা হবে। এবারের মরোক্কো সম্মেলনে নতুন একটি উপাদান যোগ হয়েছে সেটি হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে অর্থ দেয়া হবে সেটি ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনয়ন ও দুর্নীতি রোধে কর্মপন্থা ঠিক করা। এ বিষয়ে আলোচনা হবে এই সম্মেলনে। বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড ১ দশমিক ২ বিলিয়ন অর্থায়নে সারা বিশ্বে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের একটি প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৮০ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) দেয়া ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড বা ১২৮ কোটি টাকা গত এক বছরে ফেরত গেছে। এর আগেও বিভিন্ন কারনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আসা অর্থ ফেরত গেছে। ওই তহবিলে দাতাদের দেয়া অর্থ ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে দাতাগোষ্ঠীর নানামুখী টানাপোড়নের জেরে এই অর্থ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। ফলে সংস্থাটি ওই অর্থ ফেরত নিয়ে গেছে যুক্তরাজ্যে। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের ‘কমিটমেন্টের অভাবকেও’ অর্থ ছাড় বিলম্বিত হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ ছাড় না হওয়ার পেছনে দুর্নীতির ঝুঁঁকি এবং আগের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবাযু পরবির্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি একা বাংলাদেশের সমস্যা না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ২০২০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে লাগলে আরো অর্থায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে। প্রথমে এই অর্থ অনুদান হিসেবে দেয়ার কথা থাকলেও এখন স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে দেয়া হবে। দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে দেশগুলোকে এই ঋণ দেয়া হবে। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে তহবিল ব্যবহারে দুর্নীতি অভিযোগ থেকে থাকে। বাংলাদেশেও জলবায়ু তহবিল ব্যবহারে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তবে এবার মরোক্কো সম্মেলনে নতুন একটি উপাদান যোগ হয়েছে, সেটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে অর্থ দেয়া হবে সেটি ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনা।
মরোক্কো সম্মেলনে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণের মাত্রা হ্রাস করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট বিধি নিয়মগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ চুক্তি সরকারিভাবে কার্যকর হয়েছে। গত বছর প্যারিসে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে প্রায় ২০০টি দেশকে এখন থেকে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণের মাত্রা হ্রাস করার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে হবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম সংস্থান হিসেবে শিল্পোন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে বিশ্বে যে তাপমাত্রা ছিল এখন সেই তাপমাত্রাকে তার তুলনায় অনুর্ধ্ব ২ ডিগ্রি বেশি মাত্রায় রাখতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্যারিস চুক্তি না মানা হলে ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে দাঁড়াতে পারে। তবে চুক্তি মানলে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্চ ডিরেক্ট ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এম আসাদুজ্জামান বলেন, যুক্তরাজ্য যে টাকা তুলে নিয়েছে তা বাই লেটারাল ফান্ড। আর বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো অর্থ পেয়ে থাকে মাল্টি লেটারাল ফান্ড থেকে। যুক্তরাজ্য অর্থ ফেরত নিলেও অন্য তহবিলের অর্থ বহাল আছে তাই এতে বাংলাদেশের ক্ষতির কারণ মনে করছি না।
প্রতিবেদন-ইকে, সম্পাদনা: প্রণব