
ঢাকা: রাজধানীর বনশ্রীতে চাঞ্চল্যকর দুই শিশুহত্যা মামলায় মা মাহফুজা মালেক জেসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যপ্রদ শিকদার এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এর আগে ১৪ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লোকমান হেকিম আদালতে জেসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তখন লোকমান হেকিম নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, রাসায়নিক ও ডিএনএ রিপোর্ট এবং নিবিড় তদন্তে ৩০২ ধারায় জেসমিনের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনিই তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন।’
চার্জশিটে বলা হয়, সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই ২৯ ফেব্রুয়ারি বাসার মধ্যে দুই সন্তানকে হত্যা করেন মা মাহফুজা। তিনি ছেলেমেয়ের লেখাপড়া নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তা করতেন। ভাবতেন, তিনজন গৃহশিক্ষক রাখার পরও ছেলে মেয়ের পড়ালেখায় কেন উন্নতি হচ্ছে না। ভবিষ্যতে হয়তো তারা কোন কিছুই করতে পারবে না।
একপর্যায়ে মাহফুজা সিদ্ধান্ত নেন, দুই ছেলেমেয়েকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলে তাকে আর দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না। এ থেকেই দু’সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে কয়েকবার অরণীকে গলা টিপে ধরার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় হত্যা করতে পারেননি।
২৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফেরে অরণী। এর আগে ১২টার দিকে আলভীকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসেন জেসমিন। দুপুরে তাদের খাবার খাওয়ায়। অরণী পৃথক দু’শিক্ষিকার কাছে প্রাইভেট পড়ে। এসময় বেডরুমে আলভীকে নিয়ে শুয়েছিলেন জেসমিন।
বিকেল পাঁচটায় শিক্ষিকা চলে যাওয়ার পর অরণী মায়ের কক্ষে ঢোকে। পড়া ঠিকভাবে হয়েছে কি-না অরণীর কাছে জানতে চান জেসমিন। অরণী বলে, ইংরেজি পড়া দিতে পারেনি সে। সঙ্গে সঙ্গে শোয়া থেকে উঠে জেসমিন অরণীর গলা টিপে ধরেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ফ্লোরে পড়ে যায় মা-মেয়ে। এরপর অরণীর গায়ের ওপর বসে জেসমিন অরণীর ওড়না দিয়েই ১৫ মিনিট মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন।
মেয়েকে হত্যার পর জেসমিন ভাবেন, এক সন্তানকে যখন মেরেই ফেলেছেন, আরেক সন্তানকেও বাঁচিয়ে রাখবেন না। তাকে বাঁচিয়ে রাখলেও তো দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে। এরপর ঘুমন্ত আলভীকে একই ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর তারা বিষক্রিয়ায় মারা গেছে বলে অপপ্রচার চালান তিনি। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দুই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। যদিও লাশ উদ্ধারের পর জেসমিন দাবি করেছিলেন, বিষক্রিয়ায় তারা মারা গেছে। কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় বিষক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বনশ্রীর বি-ব্লকের চার নম্বর রোডের নয় নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার ভাড়া বাসায় স্ত্রী জেসমিন, এক মেয়ে অরণী ও ছেলে আলভী এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকতেন গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী আমানউল্লাহ আমান। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়।
সন্তান হত্যার পর রামপুরা থানায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার মামলা দায়ের করেন আমানউল্লাহ। মামলাটি স্থানান্তর হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) খিলগাঁও জোনাল টিমে। সন্তানদের হত্যার অভিযোগে র্যাবের হাতে এক মার্চ আটক হন জেসমিন।
প্রতিবেদন: প্রীতম সাহা সুদীপ, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ