
ঢাকা: ঘুমভাঙ্গার পর বালিশের কোন থেকে মোবাইলটা খুঁজে ঘুমঘুম চোখে সকাল শুরু, ৫ জুন ২০১৬। ব্রেকিং নিউজ দিয়ে দিনের শুরু। শিরোনাম, ‘এসপির স্ত্রী কে গুলি করে হত্যা’। তখনও বুঝে উঠতে পারিনি এই এসপি সেই এসপি— যিনি কিনা সারা দেশে পুলিশের আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাবুল আক্তার, তার সাথেও আমার গণমাধ্যমের মাধ্যমেই পরিচয়। বাবুল আক্তারের গল্প পড়ে মনে সাহস পেতাম, কে বলেছে সব নষ্টের দখলে, যেদিন সব নষ্টের দখলে যাবে সেদিন তো বাবুল আক্তাররা বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমাবেন।
‘অফিসে এসে নিশ্চিত হই মিতু কোন এসপির সহধর্মিণী’
অফিসে এসে নিশ্চিত হই মিতু কোন এসপির সহধর্মিণী। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। একে একে কি বীভৎস সব খবর আসতে থাকে— ‘অল্পের জন্য বেঁচে গেলো ছেলেটি’, ‘শিশুর চোখের সামনেই মা খুন’, ‘মাত্র ৪০ সেকেন্ডেই খুন মিতু’, ‘মিতুর শরীরে আটটি আঘাতের চিহ্ন’। সামান্য একজন গৃহিণী, একজন মা। কোন কারণে এমন পরিণতির স্বীকার, তার উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন!
বারবার চোখের সামনে অবুঝ শিশুটির মুখটা ভেসে উঠছে। কি বীভৎস! কি ভাবে আর কেমন মানসিক বিকার নিয়ে বেড়ে উঠবে শিশুটি! এই শিশু বড় হয়ে উড়তে থাকা জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ফেলবে না তো! হাসির উদ্দেশ্য খুঁজতেই বা কে যাবে! ‘মা খাওয়া দেশটা মা কি না’— এমন ভাবনায় কি বুঁদ হবে না সে?
মিতুর দাফনের পর বাবুল আক্তারের কি মনে হবে, যদি বিয়ের পর মিতু’কে নিয়ে কানাডায় চলে যেতাম, আমার মতন স্কলারের কি থাকার ছিলো এখানে?
মিতুর দাফনের পর বাবুল আক্তারের কি মনে হবে, যদি বিয়ের পর মিতু’কে নিয়ে কানাডায় চলে যেতাম। আমার মতন স্কলারের কি থাকার ছিলো এখানে? কি আছে আজ? মিতুর বাবা মা কি ভাববে— অপরাধী ধরতে এত সাহস দেখানোর কি আছে?
কে কি ভাববে— তা জানা কঠিন, তবে এই সময়ের স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেকে মানবিক প্রেমে জড়িয়ে নেওয়ার অপরাধ কি বাবুল আক্তারকে তাড়া করবে? আগামীর বাংলাদেশের কান্ডারি কি গুঁটিয়ে নিবেন নিজেকে?
‘এখন আমি নিজেই এক অদ্ভুত বিভাজনের কেন্দ্রস্থল, লিখতে গিয়ে ভিজে উঠা চোখের গল্পটা তোলা থাক’
অবরুদ্ধ গণতন্ত্রের রাজনৈতিক হিসসার কোন অংশের সাথে কিসের সম্পর্ক মিতুর? অথবা তার সন্তানদের? অথবা সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে নির্বিচারে মরে যাওয়া ১১২ জন মানুষের? অথবা নাটোরে খুন হয়ে যাওয়া খ্রিষ্টান দোকানীর?
শেষ বিকেলে ফেসবুক বন্ধুর মাধ্যমে নিহত মাহমুদা খানম মিতুর ফেসবুক আইডির খোঁজ পাই। ছবিগুলো দেখছিলাম। মিতুর হাসিমুখ আমাকে এত অপরাধী করে দেয় কেনো? আমরা একই জায়গায় জন্মেছিলাম। একই বছরে জন্মেছিলাম। একই মাসে জন্মেছিলাম। মিতু আমার ব্যাচমেট ছিলো! এখন আমি নিজেই এক অদ্ভুত বিভাজনের কেন্দ্রস্থল। লিখতে গিয়ে ভিজে উঠা চোখের গল্পটা তোলা থাক।
আমাদের কি কোনদিন দেখা হয়েছিলো মিতু?
মনিরুল ইসলাম রানা
লেখক