
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমার অভিবাসী কর্তৃপক্ষ দেশটির ইয়াঙ্গুন উপকূলে একটি নৌকা থেকে শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার ওই রোহিঙ্গারা রাখাইনের মুসলিম সম্প্রদায়ের ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
ধারণা করা হচ্ছে, সাগরপথে ঝুঁকি নিয়ে ভীনদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিলো রোহিঙ্গারা। এ ব্যাপারে তদন্ত করছে মিয়ানমার পুলিশ। মিয়ানমারের এক অভিবাসন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব কথা জানিয়েছে।
রাখাইনের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুসলিমদেরকে অনুপ্রবেশকারী বাঙালি মনে করে সরকারসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের আগস্টে রাজ্যটিতে এক রোহিঙ্গা নিধন অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর প্রায় সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হলেও জাতিসংঘ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ নেই বলে বাংলাদেশকে প্রত্যাবাসন স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র,কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ,কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে। ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার ছেড়ে পালায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এই পালানো ২০১৫ সালে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। সে বছর আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া পৌঁছায়। অনেকেই অতিরিক্ত যাত্রীবাহী সেসব নৌকা ডুবে সমুদ্রেই প্রাণ হারান।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: এম কে রায়হান