
ডেস্কঃ মীর জাফর হলো ইতিহাসের সেই কুখ্যাত নাম, এ উপমহাদেশের ২০০ বছরের পরাধীনতার পেছনে দায়ী যার বিশ্বাসঘাতকতা। আরব বেদুঈন জাতির এ বেঈমান বংশধরের নাম শত বছর ধরে বিশ্বাসঘাতকের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বয়ঃকনিষ্ঠ সিরাজউদ্দৌলার নবাবি মেনে নিতে না পেরে শওকত জংকে মসনদে বসানোর চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরও নবাব তাকে দেশছাড়া করেননি, উপরন্ত সেনাপতির মত সম্মানিত ও নির্ভরশীল পদমর্যাদায় বহাল তবিয়তে থেকে যায় মীর জাফর।
‘এই চক্রান্তের কারণেই পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ আক্রমণের মুখে মীর জাফরের অনুগত সেনাবাহিনীর একটি অংশ নবাবের বদলে ইংরেজদের পক্ষ নেয়’
ইংরেজরা যখন নবাব সিরাজউদদৌলাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করতে থাকেন, তখন গোপনে মীর জাফর ইংরেজদের পক্ষ নেন এবং নিজে নবাবের সিংহাসনে বসার আয়োজন করতে থাকেন। এই চক্রান্তের কারণেই পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ আক্রমণের মুখে মীর জাফরের অনুগত সেনাবাহিনীর একটি অংশ নবাবের বদলে ইংরেজদের পক্ষ নেয়। ফলে সহজেই পরাজিত হয় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব সিরাজউদদৌলা। সেই সঙ্গে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন, পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ বেনিয়াদের সঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদের লড়াই হয়। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মীরজাফর আলী খান। তার সঙ্গে ছিলেন মীর মদন আর মোহনলাল। মীর মদন আর মোহনলাল ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করে পরাজিত হন। আর যুদ্ধের ময়দানে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান ও তার দোসররা ধূর্ত ইংরেজ বেনিয়া লর্ড ক্লাইভের হাতে বাংলার শাসন ক্ষমতা তুলে দেয়। পরাজিত হন বাংলা, বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
১৭৫৭ সালের এই দিনে, অর্থাৎ ২৪ জুন, মীর জাফর নবাবি গ্রহণ করেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তিনি ছিলেন ইংরেজদের আজ্ঞাবহ হাতের পুতুল। ইংরেজদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৭৬০ সালে তাকে সিংহাসনচ্যুত করে তারই জামাতা মীর কাশেমকে নবাব করা হয়। অন্যদিকে জামাতা মীর কাশেমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পুনরায় মীর জাফরকে নবাব করা হয়। দাঁত নখ বিহীন পঙ্গু বাঘের মতো মীর জাফর ইংরেজদের হাতের পুতুল রূপেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। কথিত আছে, মীর জাফরের মৃত্যু ঘটেছিল কুষ্ঠ রোগে। কিন্তু ইতিহাস বলে, ১৭৬৫ সালের ১৭ জানুয়ারি মীর জাফরের মৃত্যু ঘটে বার্ধক্যজনিত কারণে। বেঈমানীর এই ইতিহাস সংরক্ষণে ভারতের মুর্শিদাবাদে মীর জাফরের প্রাসাদের মূল তোরণের নামকরণ করা হয়েছে ‘নেমক হারাম দেউল’ বা বিশ্বাসঘাতক গেট হিসেবে; আর ইতিহাসের বিকৃতি না ঘটলে ‘নেমক হারাম’ হিসেবেই এই পুতুল নবাবের কথা স্মরণ করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভবিষ্যৎ।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকেএস/টিএস