
মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন,
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশে যেমন নিষিদ্ধ ছিল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুনা। শুধু ভাষণ শুনাই নয় জাতির জনকের নামটি মুখে উচ্চারণ করতে তৎকালীন শাসকদের পক্ষ থেকে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা । ঠিক ওই সময়েই ব্রিটেনে বর্ণবাদীদের অত্যাচার চরম আকার ধারন করে। বিশেষ করে পুর্বলন্ডনের বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় বর্ণবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। পূর্বলন্ডনের বাঙ্গালীরা তখন এক কঠিন সময় পার করেন। ব্রিটেনে জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা তৃতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ বাঙ্গালীরা গঠন করেন ‘জয় বাংলা ব্যান্ড’ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আর এটিই ছিল ব্রিটেনে মূল ধারায় স্বীকৃত ব্রিটিশ বাঙ্গালীদের প্রথম ব্যান্ড দল। এই ব্যন্ড দলটি জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের অংশ বিশেষ তাদের একটি গানের ভেতর ঢুকিয়ে ‘রঙ্গিন ভালবাসা’ নামে একটি পপ গান রেকর্ড করে ১৯৯১ সালে। এই ব্যান্ড দলটি বিভিন্ন অনুষ্টানে সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি ব্রিটিশ মূলধারার টেলিভিশন গুলোতেও বাংলা পপ সঙ্গিত গেয়ে প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই পূরানো গানটি আবার নতুন আঙ্গিকে মুক্তি পাচ্ছে। এর পটভ‚মি তুলে ধরে ব্যান্ড শিল্পি ও সেসময়কার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোললনের তরুন যোদ্ধা আনসার আহমেদ উল্লাহ জানান, মূলতঃ ব্রিটেনের মূল ধারার সাথে বাংলা সংস্কৃতির পরিচয় ঘটানো। তখনকার সময় ব্রিটেনে বাংলা সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ ছিল কম, এখানে খুব বেশী পাওয়া যেতনা বাংলা গানের অডিও ভিডিও, সমগ্র ব্রিটেনে তখন হিন্দি সিনেমার দাপট, বাঙ্গালীরা ভারতীয় দোকান থেকে ভিডিও ভাড়া এনে ঘরে বসে হিন্দি সিনেমা দেখতেন ভিডিওতে। আর হিন্দি গান শুনতের টেপ রেকর্ডে। তখনকার সময় ব্রিটেনবাসী বাঙ্গালীদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যমই ছিল এটি।
বাংলাদেশে তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা পপ সর্ম্রাট গুরু আজম খান জনপ্রিয়তার শীর্ষে, গুরু আজম খানের অনুসারীরাই দেশের বাইরে জয় বাংলা ব্যান্ড নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন এই ব্যান্ড সংগঠনটির। আনসার আহমেদ উল্লাহ সংগঠনটির নাম করনের ব্যাপরে জানালেন Banned মানে নিষিদ্ধ কেন নিষিদ্ধ নাম করন করলেন তার ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে । বাংলাদেশে যুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতার নাম নেয়া যেমন নিষিদ্ধ ছিল আর ব্রিটেনে আমরা বাঙ্গলীরা বর্ণবাদিদের কাছে নিষিদ্ধ ছিলাম একারণেই বানানটি আমরা এভাবে লিখেছি Banned (নিষিদ্ধ)। নতুন ভাবে মুক্তিপাওয়া গানটির নাম ‘রঙ্গিন ভালবাসা’।
এগানটির গীতিকার ও সুরকার ব্যান্ড সদস্য জয়। গানটি ইংরেজী ও বাংলায় যে তিন শিল্পি পরিবেশন করেন তারা হলেন জয়, আনসার ও পাশা। কিবোর্ডে আমিন, গীটারে সুলতান। এই পপ গানটি প্রথম রেকর্ড করা হয় ১৯৯১ সালে। এই জয় বাংলা ব্যান্ড দলের কর্ণধার আনসার আহমেদ উল্লাহ জানালেন জাতির জনকের জন্ম শতবর্ষ ২০২০সালটি মুজিববর্ষ হিসেবে জাতীয় ভাবে পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। আমরা লন্ডনে জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীতে ইউটিউবে গানটি পূনরায় মুক্তি দিতে পারায় নিজদের সৌভাগ্যবান মনে করছি।