
ঢাকা: সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুর্নবিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজের রায় আজ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দু’জন হলেন- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন।
তার পরে রায়ের অনুলিপি কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে। কারাকর্তৃপক্ষ (আইজিপি), জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট), বিচারিক আদালত সিলেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়সহ সাত স্থানে রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এ রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মুফতি হান্নানের রিভিউ আবেদন গত ১৯ মার্চ খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আজ রিভিউ খারিজের ৫ পৃষ্ঠার পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
এখন রিভিউ খারিজের এ রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্টার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ।
ফলে হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকরে এখন আর কোনো আইনি বাধা রইল না বলে জানায় আইনজীবীরা। তবে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন তারা। এ আবেদন না জানালে বা তা প্রত্যাখ্যাত হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ফাঁসি কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এন কে সাহা।
আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনায় আনা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল রেখে গত ৭ ডিসেম্বর রায় দেয় আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে আসামিদের আনা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই রায় দিয়েছিল। এ রায় রিভিউ’র আবেদন করে আসামিপক্ষ। আইনজীবীরা জানায়, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আপিল না করায় তাদের যাবজ্জীবন বহাল রয়েছে। এ মামলায় পাঁচ আসামিই কারাগারে রয়েছেন।
সিলেটে হযরত শাহজালাল (রা.) এর মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে আনোয়ার চৌধুরী ওপর গ্রেনেড হামলার হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যায় হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) অন্তত ৭০ জন ওই ঘটনায় আহত হয়।
পুলিশ ওইদিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এর পর তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান। তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলায় ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
বিধান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে ডেথ রেফারেন্সসহ প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। গত ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায় পাওয়ার পর গত ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য (রাষ্ট্রনিযুক্ত) আইনজীবী নিয়োগ করে।
প্রতিবেদক: ফায়েজ, সম্পাদনা: ইয়াসিন