
মনিরুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিবেদক;
আতিকুর রহমান জন্মেছেন বরিশালের দেহেরগতি ইউনিয়নে। তাঁর তিন প্রজন্ম এ অঞ্চলের মানুষের সাথে অতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে আছেন। বাবা ও ভাই ছিলেন বরিশালের দেহেরগতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। পারিবারিক ভাবে রাজনৈতিক বলয়ে বেঁড়ে ওঠা আতিকের যৌবনের একটা সময় পর্যন্ত কেটেছে স্টালিন, লেলিন ও মার্ক্স পড়ে। আর এক বর্শীয়ান নেতা রাশেদ খান মেননের হাত ধরে পেয়েছেন রাজনীতির অক্ষরজ্ঞান। বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদকও তিনি ।
আতিকুর রহমান ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবমৈত্রীর সহসভাপতি তবে এখন পরিবর্তন এসেছে রাজনৈতিক বোধে, যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে। নিয়মিত কাজ করছেন এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে। গত ৭ বছরের নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে মানুষ তাঁকে নতুন ভাবে গ্রহণ করেছে, ভালবেসেছে। মূল ধারার রাজনীতির ফলে আরও বেশি মানুষের কাছে পাশে আসতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন আতিকুর রহমান।

ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৩(বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। জোটের ছোট দলের এমপি থেকে মূলদলের এমপি উন্নয়ন কর্মকান্ড বেশি গতিশীল করতে সক্ষম বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই একই আসনে নির্বাচন করেন আতিক।
পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর সহ বড় মেগা প্রজেক্টগুলোকে দক্ষিণ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান আর্থনীতিতে যোগ করতে চান নব কর্মকৌশলে। নব যে শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে তাতে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে শ্রমবাজারের চাহিদা স্থানীয় ভাবে পূরন করতে যা যা করণীয় তিনি করবেন বলে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। কথা বলেছেন বরিশালের সাম্প্রতিক অভ্যান্তরীণ রাজনীতির হালচাল নিয়েও;
সে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আপনি তুলনামূলক নতুন তবে আপনার জনপ্রিয়তা ঈর্শনীয়, এর কি কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ আছে ?
আতিক : দেখুন আমার জীবনের সমীকরণ হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন। বাবা স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান ছিলেন, ভাই এখন চেয়ারম্যান। আমার পরিবারের সবাই নিজেদের সামার্থ্যের বাইরেও মানুষের সাথে ছিলেন। আর সে মানুষ তাঁদের প্রজন্মের পরবর্তী প্রতিনিধিকেই তো চাইবে।
পারিবারিক লেগেসির বাইরে আমি আমার জায়গা থেকে কোনো গ্যাপ রাখি নাই। ইতিমধ্যে আমি যা করেছি, তা এ আসনের এমপিরাও করেনি। যেহেতু এসকল কিছু দৃশ্যমান, তখন মানুষের ভালোবাসা পাওয়া স্বাভাবিক। আমি অবশ্য এই ভালোবাসাকে জনপ্রিয়তা বলতে চাইনা। মানুষের ভালোবাসাই জীবনের একমাত্র সমীকরণ হয়ে থাক।
কেন্দ্র থেকে কি নির্দেশনা পেয়েছেন ?
আতিক : কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগে আছি। এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে আমাকে। তার সাথে সরকারের ধারাবাহিক সাফল্য প্রচার প্রচারণায় গুরুত্ব দিতে বলেছে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গল্প সাধারণ মানুষদের জানাচ্ছি। অবশ্যই আশা করি কেন্দ্র আমাকে এবং এ অঞ্চলের মানুষকে নিরাশ করবে না।
মুলাদী-বাবুগঞ্জ (বরিশাল-৩) নিয়ে আপনার উন্নয়ন ভাবনা কি ?
আতিক : আমি আমার এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে প্রথম একটা দুঃখের কথা দিয়ে শুরু করতে চাই, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বরিশাল ৩ আসনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন মীরগঞ্জ সেতুটি কেউ করতে পারেনি। অথচ হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদির মানুষের ঢাকা ও বরিশালে সাথে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগের এই একটাই রুট। চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যে আমরা পিছিয়ে গেলাম শুধু মাত্র ওনাদের উন্নাসিকতায়। একবার ভাবেন জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু হয়ে উঠলে আমাদের অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা কি হতে পারত। আমরা যাদের এত এত বছর ভোট দিয়েছে সংসদে পাঠিয়েছে, তারা আমাদের এটুকুও করতে পারেনি।
আমার ইচ্ছা জনগুরুত্বপূর্ণ মীরগঞ্জ সেতুর বাস্তবায়ন। এটা আমার ওয়াদা, আমার মানুষ ও মাটির সাথে।
খুবই নিন্মআয়ের মানুষের বাস এ আসনে। অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী। দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনীতেতে এখন যে জোয়ার তাকে একটা কৌশল গতরূপ রেখায় নিয়ে আসতে হবে। তিন ঘন্টায় ঢাকা গিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে রাতে বাড়িতে এসে এখন ভাত খাওয়া যায়। নিশ্চয়ই আর আগের মত করে ভাবলে হবে না।
এ্যাডভান্স কিছু করতে হবে যাতে পরের প্রজন্মও সে সুবিধা পায়। আমি অবশ্য এসব নিয়ে কাজ করছি, এখনই বলতে চাইনা। আমার নির্বাচনের ইশতেহারে পাবেন সব। এর বাইরেও নদী বেস্টিত উপজেলাগুলির সাথে বাংলদেশের সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে পারলেই এতে ভোগান্তি কমবে ২০ লাখ মানুষের।
আর একটা কথা না বললেই নয়; মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি না করে, যা যার মৌলিক উদপাদন তা নিয়ে যেন নিজের বাজারে নিজেই পৌঁছাতে পারে। একটা ডিফারেন্ট কমিউনিকেশ প্রসেস নিয়ে ভাবছি অনেক দিন। স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগিয়ে কৃষিপন্যের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা দিতে চাই।
বরিশাল মহানগরের অভ্যান্তরীণ রাজনীতি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি ?
আতিক : অভিমান কেটে যাবে নিশ্চিত। আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর যা অবদান তা পূজনীয়। তিনিই তিলে তিলে করে আওয়ামী লীগকে এতটা শক্তিশালী করেছেন এ অঞ্চলে। আমার তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অনুপ্রেরণায় চলি। বিদ্যমান যে পরিস্থিতি তা পারিবারিক অভিমান, আমি নিশ্চিত কেটে যাবে।
অন্যদিকে সদর ৫ আসনের জাহিদ ফারুক ভাই। নদীর কুলের মানুষ, তিনিই বুঝবে কুল ভাঙ্গার যন্ত্রণা। তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পাওয়ায় আমিও বেশ আনন্দতি হয়েছিলাম। আমি সকলকে অনুরোধ করবো সকল দ্বিধা ভ্রান্তি ভুলে আসুন, প্রথমে বাংলাদেশের জন্য এক হই, শেখ হাসিনার জন্য এক হই সর্বোপরি বরিশালের উন্নয়নে এক হই। আমরাই এদেশের অর্থনীতির মূলচালিকা হয়ে উঠতে পারি সবাই এক হলে।
আপনার ভোটারদের কিছু বলবেন ?
আতিক : আমার রক্তপ্রবাহে মানুষের রাজনীতি। আমি এ মাটির সন্তান। আপনার ভোট পেয়ে, যে ব্যবসা করি সংসদে তার স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাওয়ার জন্য না। আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি। রাজনীতিতে এটাই আমার বৃহৎ স্বার্থ।