
কিশোরগঞ্জ: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান মারা গেছেন। সোমবার ভোর ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় পলাতক থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির রব্বানী রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নানের বড় ছেলে আজিজুল হকের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৩ মে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী মান্নান ও দুই সহোদরসহ চার রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ২৩তম এ রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় করিমগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান, রাজাকার ক্যাপ্টেন এ টিএম নাছির, তার ভাই আইনজীবী শামছুদ্দিন আহমেদ এবং অপর দুই রাজাকার হাফিজ উদ্দিন ও আজাহারুল ইসলাম এলাকাবাসীর কাছে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তাদের নৃশংস বর্বরতার কথা এখনও ভুলতে পারেনি এলাকাবাসী। হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অসংখ্য অপরাধে লিপ্ত ছিলেন এসব রাজাকার। উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগোপ ও কিরাটন ও পাশের এলাকায় নির্বিচারে হত্যা, লুট, অপহরণ অগ্নিসংযোগের তাণ্ডব চালায় তারা। এ সময় তাদের হাতে শহীদ হন ১৪ জন স্বাধীনতাকামী। বিদ্যানগর গ্রামেই হত্যা করা হয় ৮ জনকে। এছাড়া গুজাদিয়া রামনগর, আতকাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নারকীয় এসব তাণ্ডব চালায় তারা।
২০১০ সালের ২ মে করিমগঞ্জ উপজেলার আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনের ছেলে গোলাপ মিয়া কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬নং আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, নাসির উদ্দিন আহমেদ করিমগঞ্জ হাই স্কুলে পড়ার সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে তার বাবা মিয়া হোসেনকে হত্যা করেন। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি তদন্ত শুরু করে। মামলা দায়েরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা একাধিকবার সরজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান।
দন্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় আদালতে।
দীর্ঘদিন পর হলেও চূড়ান্ত রায় হওয়ায় মামলার বাদী করিমগঞ্জ আয়লা গ্রামের বাসিন্দা গোলাপ মিয়া, আশরাফ উদ্দিন ও তার লোকজন আনন্দিত হয়েছিল এবং তারা আশা করছেন দ্রুত আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার।
প্রতিবেদন: তাফসিলুল আজিজ, সম্পাদনা: মাহতাব শফি