
ঢাকা: গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মেট্রো গ্রুপের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগুন লাগার আধাঘন্টার মধ্যে কখনোই বিল্ডিং ধসে পড়তে পারে না। এটা মেট্রো গ্রুপের ষড়যন্ত্র। ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
যদিও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এটিকে নাশকতা নয়, দুর্ঘটনাই মনে করছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘মেয়র হিসেবে মনে করি এখানে কোনো নাশকতা না হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। আমি মনে করি না যে, এখানে নাশকতামূলক কিছু আছে।’
ডিসিসি মার্কেট মালিক সমিতির চেয়ারম্যান শের মোহাম্মদ বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এখানকার ব্যবসায়ীদের দোকানে আগুন দেয়া হয়েছে। তাই আগুন লাগার আধা ঘণ্টার মধ্যে ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। সাধারণত আগুন লাগলে এভাবে বিল্ডিং ধসে পড়ে না।’
অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মেট্রোগ্রুপের হাত থাকতে পারে দাবি করে তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে মেট্রো গ্রুপের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী এই মার্কেটটি ভেঙে এখানে ১৮তলা-বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু এখানকার দোকানমালিকদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।’
শের মোহাম্মদ আরো বলেন, ‘এ পর্যন্ত বহুবার আমাদের উচ্ছেদের জন্য হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ২০১০ সালে মেট্রোগ্রুপের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান মেয়র আনিসুল হক দায়িত্ব নেয়ার পর তারা দোকানমালিকদের কোনো হুমকি না দিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেন।’
ডিসিসি মার্কেট ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কাদেরও অগ্নিকাণ্ডের জন্য মেট্রোগ্রুপকেই দায়ি করেন। তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অবশ্যই ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমরা সরকারি দল করি বলে অনেক কিছুই বলতে পারছি না। তবে মেট্রো গ্রুপই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি। কারণ তাদের সঙ্গে মার্কেট নিয়ে আমাদের মামলা চলছিলো।’
ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি এসএম তালাল রেজবি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ মার্কেটে ব্যবসা করছি, ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সদস্য থেকে সভাপতি হয়েছি। এ দীর্ঘ সময়ে কখনো এই মার্কেটে এমন ঘটনা ঘটেনি। এবারই প্রথম ঘটলো, আর ভবন ধসে পড়লো। রাত দুইটায় আগুন লেগেছে, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এখনো সে আগুন নেভাতে পারলো না। ব্যবসায়ীদের সব কিছু শেষ হয়ে গেল। এর পেছনে অবশ্যই চক্রান্ত আছে।’
মঙ্গলবার রাত আড়াইটায় রাজধানী গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার আধাঘন্টার মধ্যেই ধসে পড়ে মার্কেটের কাঁচাবাজারের তিনতলা ভবনটি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট কাজ করছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি তারা। মার্কেটের পেছন দিকের কিছু অংশে এখনো আগুন জ্বলছে।
এদিকে ডিসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারের ভবনটি ধসে পরায় সেখান থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তবে আগুনে তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতি হওয়া পাকা মার্কেট থেকে মালামাল বের করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে মার্কেটের সামনের দোকানগুলো থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকান মালিককে ট্রাকে করে দামি দামি মালামালগুলো নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
আগুন যেকোনো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পাশের গুলশান শপিং সেন্টারের প্রায় সব দোকানের মালামাল রাস্তায় নামিয়ে রাখা হয়েছে। গুলশান-১ গোলচত্বর ও আশপাশের সড়কে যত্রতত্র রাখা হয়েছে মার্কেটের মালামাল। দামি চেয়ার, টেবিল, খাট, ড্রেসিং টেবিল, সোফা, আলমারি, এসি, শো পিচ, ডাইনিং টেবিলসহ গৃহ সজ্জার নানা সরঞ্জাম রাস্তার মাঝে জড়ো করে রাখা হয়েছে।
প্রতিবেদন: প্রীতম সাহা সুদীপ, সম্পাদনা: সজিব ঘোষ