
ঢাকা: চলতি বছরের মে মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ৫৯ জন ও বিভিন্ন সামাজিক সহিংসতায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। আর নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন। এছাড়া নারী নির্যাতনের চিত্রও ভয়াবহ।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন বলছে, ‘শুধুমাত্র মে মাসেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত, আহত, শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, পারিবারিক কোন্দলে আহত ও নিহত, গৃহকর্মী-নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল অসন্তোষজনক’।
ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় মে মাসে নিহত হন ৫৯ জন এবং আহত হন ১৩৩২ জন। যা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সহিংসতায় আহত ও নিহতের সংখ্যার দিক দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
শুক্রবার বিএমবিএস কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার ফাতেমা ইয়াসমিনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মে মাসের মনিটরিং এর মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত দেখা গেছে’।
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় মে মাসে নিহত হন ৫৯ জন এবং আহত হন ১৩৩২ জন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সহিংসতায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণেই সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে সংস্থা মনে করে। এছাড়াও সংস্থা মনে করে নির্বাচন কমিশনের সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না। অন্যান্য রাজনৈতিক কারণে আহত হন ৪৮ জন ও নিহত হন ৪ জন।
সামাজিক অসন্তো
প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারণে বেড়ে গেছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন আহত হয়েছেন ১৪৭ জন।
ধর্ষন
মে মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪০ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ২১ জন। যেখানে বছরের প্রথম তিন মাসে শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছিল ২০ জন। নারী ধর্ষনের শিকার হয় ৭ জন। ৮ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয় যা বছরের তিন মাসের গড় গণধর্ষনের দ্বিগুন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। শিশু ধর্ষনের ২১ জন শিশুর মধ্যে ১০ জনই ঢাকা বিভাগে ধর্ষণের শিকার হয়। কুষ্টিয়াতে নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয় এক নারী। লক্ষীপুরে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় মায়া আক্তার নামে এক শিশুকে।
খুন
মে মাসে দেশে সন্ত্রাসীর হাতে নিহত হন ৭৪ জন ও আহত হন ৩৮ জন। টাঙ্গাইলে নিখিল জোয়ার্দার নামে এক দর্জিকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ মাসেই বান্দরবনে এক বয়স্ক বৌদ্ধকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
ক্রস ফায়ারে নিহত
এপ্রিল মাসে ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৪ জনের। পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হন ৩ জন আর র্যাবের হাতে ১ জন। জেল হেফাজতে ৭ জনের মৃত্যু হয় যেখানে বছরের প্রথম চার মাসে নিহত হন ১০ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হন ৩ জন। সেখানে বছরের প্রথম চার মাসে সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হন ১০ জন।
অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা
মাদকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে নিহতের সংখ্যা তিন ও আহত হন ৪ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ১৯৪ ও আহত ২৯৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে নিহত হন করেছে ১৫৭ জন। গণপিটুনিতে নিহত হন ১, বোমা বিস্ফোরনে নিহত ৬ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৪ জনের। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে ২৪১ জন গনগ্রেফতার হয়েছে।
শিশু হত্যা
মে মাসে ১৪ জন শিশুকে হত্যা করা হয়। নারায়ণগঞ্জে আম গাছে ঢিল মারায় সাত বছরের এক শিশুকে হত্যা করে গাছের মালিক। দিনাজপুরে শিশুকন্যাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে মা। যশোরের বেনাপোলে মুন্না নামে এক হোটেল বয়কে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ঝিনাইদহে সৎ মায়ের হাতে ‘খুন’ হয় এক শিশু। নারায়নগঞ্জে সুমাইয়া নামে এক শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা করে মসজিদের এক মুয়াজ্জিন।
আত্মহত্যা
মে মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৫ জন। এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও ২২ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকাতেই আত্মহত্যা করে আট নারী ও পাঁচ পুরুষ। শুধুমাত্র ঢাকা জেলায় আত্মহত্যা করে মোট ১০ জন। বাকী ঘটনাগুলো ঘটে বারশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
যৌতুক
যৌতুকের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে ৬ জন নারীকে। ঢাকা বিভাগে যৌতুকের বলি হয়েছেন ৪ জন। নারায়ণগঞ্জে স্বামী শ্বশুরের দাবিকৃত যৌতুক বাবদ অটোরিকশা না দেয়ায় লাকি আক্তার নামে এক নববধূকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পারিবারিক কলহ
পারিবারিক কলহে মে মাসে নিহত হন ৩৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১২ জন ও নারী ২২ জন। বিভিন্ন কারণে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৮ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এসব মৃত্যু সংগঠিত হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে নাগরিকের মানবাধিকার লংঘন হতে থাকলে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা মারাত্মকভ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফএইচ/এমএস/এসজি