
ঢাকা: যাত্রাকে প্রতি দিনের পারিবারিক বিনোদন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রা ফেডারেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সেমিনার কক্ষে ‘ঐতিহ্যবাসী যাত্রা শিল্প আজকের বাস্তবতায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে আহ্বান জানানো হয়।
ফেডারেশনের সভাপতি তাপস সরকারের সভাপতিত্বে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত সেমিনারে ১৬টি সুপারিশ করা হয়।
সেমিনার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও যাত্রা শিল্প উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী।
বর্তমান বাস্তবতায় ঐতিহ্যবাহী যাত্রা শিল্প এবং এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষদের বেঁচে থাকার স্বার্থে যাত্রার পারমিশনকে সহজতর করার এবং যাত্রার মাঠে অশ্লীলতা প্রদর্শনকারী তথাকথিত একশ্রেণীর যাত্রা দল, মালিক ও শিল্পীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান সেমিনারে প্রধান অতিথি বিশ্ব আইটিআই’র সাবেক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার।
বিশিষ্ট যাত্রা গবেষক ডঃ তপন বাগচী তার প্রবন্ধে যাত্রাকে প্রতি দিনের পারিবারিক বিনোদন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো-
১. আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমকালীন বিষয় নিয়ে যাত্রাপালা রচনার জন্য দেশীয় পালাকার ও নাট্যকারণগণ উদ্যোগ নিতে পারেন।
২. মাসে অন্তত একবার মহিলা সমিতি, গাইড হাউস কিংবা জাতীয় নাট্যমঞ্চে যাত্রানুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
৩. বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবং বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত যাত্রানুষ্ঠান সম্প্রচারের পুনঃউদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. গণযোগাযোগ অধিদফতর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তথ্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবে যাত্রাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
৫. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর প্রতিটি জেলা শাখায় নিয়মিত যাত্রা মঞ্চায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
৬. একটি জাতীয় যাত্রামঞ্চ এবং প্রতি শহরে ও থানায় স্থায়ী যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
৭. প্রতি বছর নির্দিষ্ট মৌসুমে জাতীয় যাত্রা-উৎসব আয়োজন করতে হবে।
৮. যাত্রাশিল্পে অবদানের জন্যে জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিত সম্মান ও পুরস্কার প্রবর্তন করতে হবে।
৯. যাত্রাদল গঠনে অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা চালু করা।
১০. যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতার অবসানের উদ্যোগ নিতে হবে।
১১. স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় নয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কেই যাত্রাশিল্পের তদারকি, অনুমতি প্রদান, লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স নবায়নের সর্বময় ক্ষমতা অর্পন করতে হবে।
১২. যে সকল দলের লাইসেন্স রয়েছে, প্রতিরাতের যাত্রানুষ্ঠানে জন্যে তাদের পৃথক অনুমতি সংগ্রহের প্রথা বাতিল করতে হবে।
১৩. যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ, জুয়া ও হাউজি আয়োজনকারীদের কঠোর শাস্তিপ্রদানের আইন করতে হবে।
১৪. আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতি এড়াতে রাতব্যাপী যাত্রানুষ্ঠানের পরিবর্তে ‘সান্ধ্য যাত্রা’ অর্থাৎ সন্ধা ৭টায় শুরু হয়ে রাত ১০ টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এই মর্মে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
১৫. যাত্রাকে ইন্ডাষ্ট্রি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ‘যাত্রাশিল্প উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করা যেতে পারে।
১৬. ‘অভিনয় নিয়ন্ত্র আইন’ বাতিল হলেও যাত্রাশিল্পকে নিয়ন্ত্রণের কালাকানুন, ১৯৩৩’ বাতিল হয়নি। এটি বাতিল করতে হবে।
উল্লেখিত ১৬ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন এবং উক্ত প্রবন্ধের ওপর একে একে আলোচনা করেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ড: নিরঞ্জন অধিকারী, জোৎনা বিশ্বাস, গোলাম সারোয়ার, আক্তারুজ্জামান এবং হাবিব সারোয়ার, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, ফাতেমা আক্তার রত্না, অজয় সরকার, গাজী লিয়াকত, এম এ হান্নান ও এস এম সফি, শিউলী জামান।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যাত্রা ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল, অ্যাডভোকেট হোসেন কবির শাহীন।
বিজ্ঞপ্তি, সম্পাদনা-ময়ূখ ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম