
ইয়াছিন রানা: দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে ২৮ ডিসেম্বর। এজন্য রোববার তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। পার্বত্য তিন জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তর যেমন- উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদে তা হচ্ছে না। অন্য যে কোন নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী বাছাই করার সুযোগ পেলেও এ নির্বাচনে ভোটাররা তা পারবে না। কারণ সাধারণ ভোটাররা এ নির্বাচনের ভোটার না।
তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার কারা?
এর আগে জেনে নেই এ নির্বাচনে প্রার্থী কারা হতে পারবেন- আইন অনুযায়ী, ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যে কোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে তিনি নিজে একজন জনপ্রতিনিধি হলে পদে থেকে প্রার্থী হওয়া যাবে না।
এবার জেনে নেই কারা ভোটার এ নির্বাচনে
আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য। এসব ভোটারদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন।
মোট ভোটার
স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার; ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৮ ডিসেম্বর ভোটের দিন ঠিক করে দেয়ায় এখন অন্যান্য তারিখ ঘোষণা বাকি রয়েছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমার জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হতে পারে। দুই ও তিন ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় রাখা হতে পারে নয় ডিসেম্বর।
এ নির্বাচনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এবারই প্রথম অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে।
জেলা পরিষদ ব্রিটিশ আমল থেকেই চালু ছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে এই জেলা পরিষদ কাঠামোকে অনেক বেশি কার্যকর করে জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করেন। কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমান আবার জেলা পরিষদ গঠন করেন। ওই সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হতো। জেলা পরিষদের মাধ্যমে তখন মূলত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হতো। জেনারেল এরশাদের আমলেও জেলা পরিষদ কার্যকর ছিল।
১৯৮৮ সালে ঠিক হয় সরকার মনোনীত ব্যক্তিরা নন, সংসদ সদস্যরা হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু ১৯৯১ সালে গঠিত বিএনপি সরকারের সময় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পরে। ওই সময় উপজেলা পরিষদও বিলুপ্ত করা হয়। মূলত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোন নির্বাচন না দেয়ায় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকারে উপসচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ে এ পরিষদ পরিচালনা শুরু হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জেলা পরিষদ কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ আইন-২০০০-এর ৮২(১) ধারা অনুযায়ী দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। এ আইনানুসারে, জেলা পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রশাসক জেলা পরিষদের কার্যাবলী সম্পাদন করবেন। তবে জেলা পরিষদের নির্বাচন কবে হবে এবং প্রশাসক কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, তার কোন সময়সীমার উল্লেখ নেই ওই আইনে।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ